জেলায় জেলায় বিভিন্ন কেন্দ্রে চলছে টিকাকরণের কাজ

এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে মোট ২০৭টি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে টিকাকরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৪২
Share:

জেলাশাসক রশ্মি কোমল (বাঁ-দিকে) দেখছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে টিকা দেওয়ার কাজ। নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশ জুড়ে শনিবার থেকে শুরু হল টিকাকরণ কর্মসূচি। এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে মোট ২০৭টি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে টিকাকরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। আপাতত করোনা টিকা হিসাবে কোভিশিল্ড দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দফায় টিকাকরণের জন্য চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

সেই মতো কলকাতা-সহ অন্যান্য জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে টিকা দেওয়ার কাজ। সংশ্লিষ্ট জেলার উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকরা উপস্থিত থেকেছেন এই কর্মসূচিতে। টিকা নেওয়ার পর কারও দেহে কোনও রকম অসুবিধা হচ্ছে কি না, তাও নজর রাখা হচ্ছে টিকাকেন্দ্রগুলিতে।

মালদহ

Advertisement

মালদহ জেলার ৮টি কেন্দ্র থেকে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। জেলায় মোট ৮০০ জনকে দেওয়া হবে এই টিকা। ওই জেলার মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লকের বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতাল, কালিয়াচক-১ নম্বর ব্লকের সিলামপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতাল, রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল, হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, চাঁচল মহাকুমা হাসপাতাল এবং বামনগোলা ব্লকের মুদিপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালে চলছে টিকা দেওয়ার কাজ। প্রতিটি কেন্দ্রে ১০০ জন করে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাত তলায় পর্যবেক্ষণ কক্ষে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দোপাধ্যায়, মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য আধিকারিক। এই বিষয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত টিকাকরণের জন্য প্রায় ৩ হাজার নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

মুর্শিদাবাদ

মালদহের মতো মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া হচ্ছে অক্সোফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা টিকা। বহরমপুর, কান্দি সহ জেলার মোট ১৩টি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হচ্ছে এই টিকা। মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘প্রথম দিনে শুধু চিকিৎসক বা নার্স নয়, অন্যান্য কোভিড যোদ্ধাদেরও এই ভ্যাকসিন দেওয়া হল প্রথম। যা মুর্শিদাবাদ জেলায় এক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ।’’

ঝাড়গ্রাম-পশ্চিম মেদিনীপুর

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মতো ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেও শুরু হয়েছে টিকাকরণের কাজ। ঝাড়গ্রামে প্রথম টিকা নিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রথম টিকাটি নিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু)-র মেডিক্যাল অফিসার শুভজিৎ ভুঁইয়া। মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল পঞ্চানন কুন্ডু, সিএমওএইচ নিমাইচন্দ্র মণ্ডল, ডেপুটি সিএমওএইচও টিকা নিয়েছেন এ দিন।

আরও পড়ুন: ন্যাতা-বালতি ধরা হাতে ডাক্তারদের আগেই টিকা পেলেন মুন্না-সঞ্জয়-চন্দনরা

ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ৪টি কেন্দ্র থেকে মোট ৪০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এই জেলার নার্সিং ট্রেনিং স্কুল, এসিএমওএইচ মিটিং হল, চিল্কিগড় গ্রামীণ হাসপাতাল এবং গোপীবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও আরও ১১টি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হবে এই টিকা। যদিও পরবর্তী সময়ে জেলার ২৫টি কেন্দ্র থেকে এই টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইতিমধ্যে এসে গিয়েছে ২৬ হাজার ভ্যাকসিন। ঝাড়গ্রাম জেলায় এসেছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ভ্যাকসিন।

পূর্ব বর্ধমান

পূর্ব বর্ধমানেও কোভিড ভ্যাক্সিন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এই জেলার মোট ৭টি কেন্দ্র থেকে কোভিশিল্ড টিকা দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমান হাসপাতালের সাফাই কর্মী সঞ্চয় মাঝিকে প্রথম টিকা দেওয়া হয়। সে সময় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাততালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান।

আরও পড়ুন: টিকাকরণের শুরুতে রাজ্যে ফেল কেন্দ্রের অ্যাপ, তথ্য হাতেকলমে

পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট ৩১ হাজার ৫০০ জনকে করোনা টিকা দেওয়া হবে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও বর্ধমান পৌরসভার ঝুরঝুরেপুল স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ভাতার, কালনা, কাটোয়া, পূর্বস্থলী ও মেমারিতে দেওয়া হচ্ছে টিকা। নির্দিষ্ট বিধি মেনে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি টিকা নেওয়ার পর অবজারভেশন রুমে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে টিকা গ্রহীতাদের।

পশ্চিম বর্ধমান

রাঢ়বঙ্গের এই জেলায় ৬টি কেন্দ্র থেকে শনিবার টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে আসানসোলের সুকান্ত ময়দানে অবস্থিত আসানসোল পুরনিগমের অফিস, সালানপুরের পিঠাই কেয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জামুরিয়া বাহাদুরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রানিগঞ্জের স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দুর্গাপুরের সৃজনী হল এবং পানাগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রত্যেক কেন্দ্রে ১০০ জনকে দেওয়া হবে টিকা। আগামী ৩ দিন টিকাকরণের কাজ চলবে। আসানসোলের সুকান্ত ময়দানে পুর নিগমের প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা স্বাস্থ্য বিভাগের বিদায়ী মেয়র পারিষদ দিব্যেন্দু ভগৎ প্রথম টিকা নিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণশশী রায় ও পৌর কমিশনার নীতিন সিংঘানিয়া। রানিগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রথম টিকা নিলেন চিকিৎসক অভীক গুপ্ত। অভীক টিকা নেওয়ার পর বলেছেন, ‘‘তিনি সুস্থ আছেন। টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়ার যে অভিজ্ঞতা, সেই সেই রকমই অনুভূতি।’’

জলপাইগুড়ি

দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় শুরু হয়েছে কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচি। ধূপগুড়ি হাসপাতালে প্রথম টিকা নেন স্বাস্থ্যকর্মী বীরেন্দ্রনাথ রায়। তবে অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্মী সময়ে উপস্থিত না হওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে যায় এই কর্মসূচি। সাড়ে ৯টার বদলে ১১টা থেকে শুরু হয় তা।

করোনার টিকা নিচ্ছেন আসানসোল পুরো নিগমের প্রশাসক বোর্ডের সদস্য দিব্যেন্দু ভগৎ। নিজস্ব চিত্র।

উত্তর ২৪ পরগনা

এই জেলার ১৬টি কেন্দ্র থেকে শুরু হয়েছে টিকা দেওয়ার কাজ। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রথমে টিকা দেওয়া হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে প্রথম টিকাটি বাগদার বিডিও জ্যোতিপ্রকাশ হালদার নেওয়ায় তৈরি হয় বিতর্ক। বারাসতে টিকাকরণের পরিদর্শনে এসে সেই বিতর্কে ইতি টেনেছেন ওই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলাশাসক। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেছেন, ‘‘জেলার ১৬টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৬০০ জন টিকা পাবেন। যেমন টিকা আসবে, সেই ভাবে বাকিদেরও দেওয়া হবে।’’

হাওড়া

শনিবার হাওড়াতেও শুরু হয়েছে কোভিশিল্ড দেওয়ার কাজ। জেলার মোট ৮টি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হচ্ছে এই টিকা। নবান্ন থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে গোটা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়ায় জেলা হাসপাতালের পাশাপাশি আমতা গ্রামীণ হাসপাতাল, বাগনান গ্রামীণ হাসপাতাল, গাববেড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, কমলপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, মুগকল্যাণ গ্রামীণ হাসপাতাল, উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ও উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে টিকা কেন্দ্র করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement