আবৃত: প্রবল গরমে মাথা-মুখ ঢেকে গন্তব্যের পথে। মঙ্গলবার, ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে প্রায় প্রতিটি রাজ্যই নানা কোভিড-বিধি আরোপ করেছে। কিন্তু অভিযোগ, সেই সমস্ত বিধির পরোয়া না-করেই অনেকে বেড়াতে চলে যাচ্ছেন ভিন্ রাজ্যে। ভ্রমণ সংস্থাগুলির বক্তব্য, করোনা আবহে বেড়াতে গেলে এখন আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রাজ্য পর্যটকদের কাছে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট থাকা
বাধ্যতামূলক করেছে। অনেক রাজ্য আবার নিয়ম করেছে, পর্যটকদের সঙ্গে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট থাকলেও বিমানবন্দরে তাঁদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করাতে হবে।
প্রতি বছর গরমে এ রাজ্যের অসংখ্য মানুষ শিলিগুড়ি হয়ে সিকিমে বেড়াতে যান। সেই সিকিমেও এ বার ঢুকতে গেলে দেখাতে হবে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট। সিকিম সরকার সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ওই রাজ্যে ঢুকতে গেলে আগামী ২০ এপ্রিল থেকে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট লাগবে। সেই রিপোর্ট ৭২ ঘণ্টার বেশি পুরনো হলে চলবে না। কারও সঙ্গে কোভিড রিপোর্ট না থাকলে সিকিমের মেল্লি বা রংপো সীমানায় তাঁকে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে নিতে হবে।
ভ্রমণ সংস্থাগুলির মতে, সিকিমের মতো পর্যটন কেন্দ্রে কোভিড নিয়ে এ হেন কড়াকড়িতে এ বার পর্যটকদের ভিড় বেশ কিছুটা কমবে। শহরের একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার শুভ্র মুৎসুদ্দি বলেন, “এ বছরের জানুয়ারিতে যখন কোভিড অনেকটা কমে গিয়েছিল, তখন গরমের ছুটিতে সিকিম যাওয়ার জন্য বেশ কিছু পর্যটক বুকিং করেছিলেন। এখন করোনা ফের বেড়ে যাওয়ায় অনেকে সেই বুকিং বাতিল করছেন। কিন্তু খুব কম সংখ্যক হলেও যাঁরা বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁদের সেখানকার করোনা-বিধি জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে সব শুনে অনেকেই সফর বাতিল করছেন।”
গরমে জম্মু কাশ্মীরেও বেড়াতে যান অনেকে। এ বার সেখানেও বিমানবন্দরে নেমেই কোভিড পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। লাদাখ ঘুরতে গেলেও বিমানবন্দরে নেমেই দেখাতে হচ্ছে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট আবার ৯৬ ঘণ্টার বেশি পুরনো হলে চলবে না।
এই মুহূর্তে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার, হৃষীকেশ বা মুসৌরিতে যেতে গেলেও লাগবে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট। তবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে হিমাচলপ্রদেশে গেলে এখনও পর্যন্ত কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট লাগছে না।
কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট লাগছে আন্দামান ভ্রমণের ক্ষেত্রেও। রিপোর্ট সঙ্গে না থাকলে সেখানে নেমেই করাতে হচ্ছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট। একটি ভ্রমণ সংস্থার এক আধিকারিক জানান, কোনও পর্যটকের সঙ্গে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট থাকলেও যাঁরা সেই রিপোর্ট পরীক্ষা করছেন, তাঁদের কারও সন্দেহ হলে ফের সেই পর্যটককে কোভিড পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
কোভিড নিয়ে এমন নানা বিধিনিষেধ সত্ত্বেও কেউ কেউ বেরিয়ে পড়ছেন ঘুরতে। বাগুইআটির অরিন্দম বসু যেমন। এক বন্ধু ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে সস্ত্রীক ঘুরে এলেন কাশ্মীর। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত অরিন্দম বললেন, “জানুয়ারিতে কোভিড কমে যেতে কাশ্মীরের টিকিট কাটি, মার্চ মাসের গোড়ায় যাব ভেবে। মার্চে ফের কোভিড বাড়তে শুরু করলেও পরিকল্পনা বাতিল করিনি। কোভিডের নিয়মকানুন মানলে কাশ্মীরে আর অন্য কোনও সমস্যা নেই।”
সিকিমে যেতে গেলে কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে শুনে অনেকেই পরিকল্পনা পাল্টে দার্জিলিং, কালিম্পং বা ডুয়ার্স চলে যাচ্ছেন। এমনটাই জানাচ্ছে পর্যটন সংস্থাগুলি। তাদের মতে, এই রাজ্যে ভোট চলছে বলে এখনও পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে কোভিড-বিধি নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়নি। ভোটের ফল প্রকাশের পরেই শুরু হয়ে যাবে কড়াকড়ি।
‘ট্র্যাভেল এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’-এর সভাপতি নীলাঞ্জন বসু বললেন, “গত এক বছর ধরে ব্যবসা কার্যত কিছুই হয়নি। এ বছর এখনও পরিবহণ ব্যবস্থা সচল আছে বলে খুব কম সংখ্যক মানুষ বেরিয়ে পড়েছেন। তবে আমরা সবাইকেই কোভিডের নিয়মকানুন মেনে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে বলছি।”
পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতির জেরে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লাগাতার আর্থিক ক্ষতি হয়ে চলেছে তাঁদের। কিন্তু কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনও সরকারই তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি।