ecl

Coal Scam: সরকারি সংস্থার বদলে স্ট্যাম্প পেপারে সই করে ঋণ কয়লা-কর্তার! বিস্মিত বিচারকও

ইসিএল-কর্তা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী দুলাল ভট্টাচার্য সোমবার আদালতে জানান, ওই ২০ লক্ষের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তাঁর মক্কেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২২ ০৬:২৭
Share:

সিবিআই-কে জেলে গিয়ে অভিযুক্তদের জেরা করার অনুমতিও দিয়েছেন কোর্ট ফাইল ছবি

ইস্টার্ন কোল ফিল্ডস লিমিটেড বা ইসিএলের মতো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার স্তরের কোনও প্রাক্তন কর্তার যদি ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তিনি তো সরকারি সংস্থা থেকেই তা নিতে পারেন। তার বদলে রেভিনিউ স্ট্যাম্প দেওয়া কাগজে সই করে এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নিলেন কেন? রীতিমতো বিস্ময়ের সঙ্গে সোমবার এই প্রশ্ন তুলেছেন আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী।

Advertisement

কয়লাপাচার মামলায় অভিযুক্ত প্রাক্তন ইসিএল-কর্তা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তারা নগদ ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছিল বলে সিবিআইয়ের দাবি। সুভাষবাবুর আইনজীবী দুলাল ভট্টাচার্য সোমবার আদালতে জানান, ওই ২০ লক্ষের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তাঁর মক্কেল। আদালতে তথ্যপ্রমাণ পেশ করে আইনজীবী দাবি করেন, এক নিকটাত্মীয়ের বিয়ের জন্য বন্ধু ও পরিচিতদের কাছ থেকে ওই টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সুভাষবাবু।

সেই তথ্যপ্রমাণ দেখেই বিস্ময় প্রকাশের পাশাপাশি বিচারক প্রশ্ন তোলেন, এমন এক উচ্চ পদাধিকারী সরকারি সংস্থার বদলে স্ট্যাম্প পেপারে সই করে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে এত বিরাট অঙ্কের টাকা ঋণ নেবেন কেন? দুলালবাবু জানান, সেই সময় টাকার জরুরি প্রয়োজন থাকায় ও-ভাবে ঋণ নেওয়া হয়। যাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল, তাঁর নামও আদালতে জানানো হয়েছে।

Advertisement

সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমারের অভিযোগ, কয়লা পাচারে প্রধান অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে ‘লালা’র কাছ থেকে টাকা লেনদেনের সঙ্গে সুভাষবাবুর যোগসূত্র মিলেছে। অভিযোগ, তিনি দফায় দফায় প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। সিবিআই তাঁর বাড়ি থেকে ২০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। সিবিআই আদালতে জানিয়েছে, গত ৩১ মার্চ সুভাষবাবুর অবসরের কয়েক দিন আগে ইসিএল-কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ৫৬ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেন।

কয়লা পাচার মামলায় অভিযুক্ত সুভাষবাবু-সহ ইসিএলের আট জন প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তা ও কর্মীকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সিবিআই-কে জেলে গিয়ে অভিযুক্তদের জেরা করার অনুমতিও দিয়েছেন তিনি। ১ অগস্ট অভিযুক্তদের ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সুভাষবাবু ছাড়াও অভিযুক্ত সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ মল্লিক, তন্ময় দাস, সুভাষচন্দ্র মৈত্র, মুকেশ কুমার, রিঙ্কু বেহার ও দেবাশিস মুখোপাধ্যায়কে সোমবার আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তদের যাতে কোনও ভাবেই জামিন দেওয়া না-হয়, সেই জন্য সিবিআইয়ের তরফে আগেই লিখিত আর্জি জানানো হয়েছিল। অভিযুক্তদের আইনজীবী আশিস মুখোপাধ্যায়, আশিস কুমার, অঙ্কিতা সেনগুপ্ত, উদয়চাঁদ মুখোপাধ্যায়, পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়েরা জানান, পাঁচ দিন ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে রেখে নতুন কোনও তথ্য পায়নি সিবিআই। নতুন কিছু বাজেয়াপ্তও করা হয়নি। জামিন পেলে অভিযুক্তেরা নিরুদ্দেশ হযে যেতে পারেন বলে সিবিআই যে-আশঙ্কা করছে, তা অমূলক। কারণ, দেড় বছর ধরে অভিযুক্তেরা সিবিআইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়ার পাশাপাশি সব রকম সহযোগিতা করেছেন।

গত পাঁচ দিনে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান বিচারক। সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার তাঁকে জানান, গত পাঁচ দিনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও বহু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে তাঁদের আরও জেরা করা দরকার। জেল হাজতে পাঠালেও জেলে গিয়ে যাতে তাঁদের জেরা করা যায়, তার অনুমতি চান রাকেশ। তার বিরোধিতা করেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা।

অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী আশিস কুমার আদালতে অভিযোগ করেন, কয়লা চুরিতে যুক্ত সন্দেহে ইসিএলের এক প্রাক্তন সিকিয়োরিটি অফিসারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের কাছে তথ্য-সহ অভিযোগ করা হলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ কয়লা চুরি রুখতে এই আধিকারিকেরা থানায় গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ দায়ের করার সত্ত্বেও সিবিআই তাঁদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement