প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বেনিয়মের প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের লাঠি চলেছিল বৃহস্পতিবার। সেই ঘটনায় ধৃত সিপিএমের ৮ জন যুব ও ছাত্র নেতাকে শুক্রবার পুলিশের আর্জির প্রেক্ষিতে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল আদালত। রাজনৈতিক প্রতিবাদে পথে নেমে গ্রেফতার হয়েই থাকে। কিন্তু প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেলে যাওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক কালে নজিরবিহীন! বিধানসভায় সম্প্রতি পাশ হওয়া জনজীবনে শৃঙ্খলা রক্ষা ও সম্পত্তি ভাঙচুর আটকানোর আইন প্রয়োগ করা হয়েছে ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
ডোরিনা ক্রসিংয়ে বৃহস্পতিবার অবরোধ শেষ হওয়ার পরে এস এন ব্যানার্জি রোডের দিকে প্রতিবাদীদের একাংশের সঙ্গে বচসা বেধেছিল পুলিশের। তার পরেই পুলিশ লাঠি চালায়। গ্রেফতার করা হয় মোট
১২৩ জনকে। ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন নিতে অস্বীকার করায় রাতভর তাঁদের রাখা হয়েছিল লালবাজারের লক-আপেই। ব্যাঙ্কশাল আদালতে শুক্রবার তাঁদের পেশ করা হলে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্র, কলকাতা জেলা সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, এসএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মধুজা সেনরায়-সহ ৮ জনকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। ওই ৮ জনের মধ্যে মহিলা চার জন।
লালবাজার সূত্রে বলা হয়েছে, সম্পত্তি রক্ষার নতুন আইনের ৮, ৯, ১৫এ, ১৫বি ও ১৫সি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে ধৃত ৮ জনের বিরুদ্ধে। কোন সম্পত্তি তাঁরা ভাঙচুর করেছেন, তা নিয়ে পুলিশ-কর্তারা অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি। ধৃতদের এজলাসে তোলার সময়ে আদালত চত্বরে এ দিন প্রবল বিক্ষোভ দেখান বাম ছাত্র-যুবেরা। বিক্ষোভে সংহতি জানাতে গিয়েছিলেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের মন্তব্য, ‘‘যারা টেট নিয়ে দুর্নীতি করল, তারা নবান্নে। আর যারা প্রতিবাদ করতে গেল, তারা জেলে!’’ মিথ্যা মামলায় জেলে ভরার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় গড়িয়াহাট ও শ্যামবাজারে অবরোধ হয়। রাজ্য জুড়ে আরও প্রতিবাদ হবে আজ, শনিবার। আদালতে ১৪ তারিখ ফের ওই ৮ জনকে তোলার দিন কলকাতায় হবে বিক্ষোভ মিছিল। পুলিশি আচরণের প্রতিবাদ করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘সাজানো মামলা ছাত্র-যুবদের মনোবল ভাঙতে পারবে না। প্রতিবাদের শিখাও নিভবে না!’’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার ়ডাক দিয়েছেন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমও। আর দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রের বক্তব্য, ‘‘আক্রমণটা শুধু আমাদের বিরুদ্ধে নয়, গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধেই।’’