শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনজরে যাওয়ার জন্য আর যদি কোনও ল্যাম্প পোস্ট মন্ত্রিত্ব পাওয়া যায়, সেই জন্য উনি এ-সব বলছেন।’’
ফাইল চিত্র।
পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করছিলেন না তাঁরা। কাশীপুরের বিজেপি কর্মী অর্জুন চৌরাসিয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ছ’দিনের মাথায় অবশেষে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারলেন লালবাজারের বিশেষ অনুসন্ধানকারী দল (স্পেশ্যাল এনকোয়ারি টিম) বা সেট-এর সদস্যেরা। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ১৯ মে কলকাতা হাই কোর্টে রিপোর্ট পেশ করার কথা লালবাজারের।
পুলিশ জানিয়েছে, অর্জুনের পরিবার যে-হেতু কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি, তাই পুলিশও মামলা দায়ের করেনি। সেই কারণে ‘তদন্ত’ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে ঘটনার ‘অনুসন্ধান’ করে সেটাই রিপোর্ট আকারে আদালতে পেশ করার কথা।
এই অনুসন্ধানের অঙ্গ হিসেবেই কলকাতার সেনা হাসপাতালের কাছ থেকে অর্জুনের পোশাক পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে পুলিশ। বুধবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি উল্লেখ করে রাজ্যের কৌঁসুলি অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কোর্টের নির্দেশ না-পেলে সেনা হাসপাতাল ওই পোশাক দেবে না বলে জানিয়েছে। ওই পোশাক না-পেলে অনুসন্ধানে অসুবিধা হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত শুনানির আর্জিও জানান তিনি।
লালবাজারের খবর, মঙ্গলবারেই মৃতের পরিবারের সদস্যদের কাছে নোটিস পাঠিয়ে থানায় দেখা করতে বলা হয়েছিল। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ চিৎপুর থানায় যান অর্জুনের দুই দাদা আনন্দ ও অমিত চৌরাসিয়া। প্রায় চার ঘণ্টা পরে, সাড়ে ৩টে নাগাদ পুলিশের সঙ্গে বেরিয়ে যান তাঁরা। এর পরে মহিলা পুলিশ নিয়ে অফিসারদের একটি দল অর্জুনের বাড়িতে যায়। দলের সদস্যেরা সেখানে অর্জুনের মা এবং বোনের সঙ্গে কথা বলেন।
আনন্দ বলেন, ‘‘অর্জুন কোথায় কাজ করত, কেমন ছিল ইত্যাদি তথ্য আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়।’’ ওই মৃত্যুর জট খুলতে পরিবারের সদস্য ছাড়াও অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। ঘটনার দিন অর্জুনের সঙ্গে যাঁদের কথা হয়েছিল, তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার রাতে অর্জুনের সঙ্গে পরিবারের কারও গোলমাল হয়েছিল, নাকি অন্য কারও সঙ্গে গোলমালের কথা অর্জুন তাঁদের জানিয়েছিলেন, মূলত সেই বিষয়ে এ দিন জানতে চাওয়া হয়। অর্জুনের মধ্যে কোনও ধরনের অস্বাভাবিকতা ছিল কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় পরিবারের সদস্যদের কাছে।
অর্জুনের পরিবার জানিয়েছে, সেটের তদন্তে তাঁদের আস্থা আছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “যদি পরিবারের আস্থা থাকে, আমাদের কোনও অসুবিধা নেই।” ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার আগেই খুনের কথা বলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে তৃণমূলের তরফে যে-দাবি জানানো হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের জিজ্ঞাসা করুন, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে একটা লাইন দেখাতে পারবেন, যেখানে লেখা আছে যে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা?’’
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, ‘‘কাশীপুরের ঘটনায় ময়না-তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে বিজেপির তো নাক-কান কাটা গিয়েছে! মুখ লুকোনোর জায়গা নেই। ভবিষ্যতে নিশ্চয় এ-সব ক্ষেত্রে ওঁরা একটু সংযত হবেন।’’ তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয় এ দিন শপথ নেওয়ার পরে বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অর্জুনের বাড়িতে যাওয়া উচিত হয়নি। এর তদন্ত হওয়া উচিত।
হাওড়ায় বিজেপির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘অমিত শাহের মতো মানুষকে, যাঁকে ভারতের স্তম্ভ বলা যেতে পারে, তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার অধিকার নেই এক জন অরাজনৈতিক লোকের। শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনজরে যাওয়ার জন্য আর যদি কোনও ল্যাম্প পোস্ট মন্ত্রিত্ব পাওয়া যায়, সেই জন্য উনি এ-সব বলছেন।’’