এক নজরে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যে বৃহস্পতিবার দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে পাঁচশো ছাড়িয়ে গেল। কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্বে যা সর্বোচ্চ। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে শীর্ষ স্থানেই রয়েছে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা। বুধবারের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি টানা ৫ দিন ধরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও ২ শতাংশের উপরে রয়েছে। সব মিলিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা সংক্রমণের ছবিটা প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেওয়ার মতো।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৫১৬ জন। এর আগে শেষ বার দৈনিক সংক্রমণ পাঁচশো ছাড়িয়ে গিয়েছিল গত ১৭ জানুয়ারি। সে দিন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬৫। তার পর থেকে অবশ্য দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতে কোভিড সংক্রমণের গ্রাফ ফের ঊর্ধবমুখী। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার থেকে বেড়ে ৫০ হাজারের গণ্ডি পর্যন্ত ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর তা দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হয়েছে। এই আবহে বৃহস্পতিবার রাজ্যে পাঁচশোর বেশি দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিল। এর ফলে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৫ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৮১।
বৃহস্পতিবার রাজ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত কলকাতায়, ১৬৭ জন। এর পরই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ১১৫। আক্রান্ত বাড়ছে কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৩৬) , হাওড়া (৩৩) এবং হুগলি (২৮)-তে। এ ছাড়া পশ্চিম বর্ধমান (২৬), নদিয়া (১৩), পুরুলিয়া (১২) পশ্চিম মেদিনীপুর (১২) এবং মালদহ (১৪) জেলায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দুই অঙ্কে পৌঁছেছে। কালিম্পং এবং ঝাড়গ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় কোনও সংক্রমণ ধরা পড়েনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৩ হাজার ১৪টি। তা বুধবারের তুলনায় কিছুটা বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। প্রতি দিন যত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা হয় এবং তার মধ্যে যতগুলি পজিটিভ রিপোর্ট আসে, তার শতকরা হারকেই বলা হয় ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। বুধবার সংক্রমণের হার ছিল ২.০৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার অবশ্য তা বেড়ে হয়েছে ২.২৪ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। তার মধ্যে ২ জন কলকাতার এবং ২ জন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। এই নিয়ে রাজ্যে করোনায় প্রাণ হারালেন ১০ হাজার ৩১৬ জন।
বুধবারের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সুস্থতার হার আরও কিছুটা কমেছে। বুধবার তা ছিল ৯৭.৫৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার হয়েছে ৯৭.৫৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৪৪ জন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ১১৫ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৫০ জন। যা বুধবারের থেকে এক লাফে ১৬৮ জন বেড়ে গিয়েছে।
সারা দেশেই যখন করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, ঠিক সেই সময়েই টিকাকরণের দিকে জোর দেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকে বৃহস্পতিবার সকালে যে তথ্য দিয়েছে সেই অনুযায়ী, বুধবার টিকাকরণ হয়েছে ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৯৩১ জনের। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে মোট ৪২ লক্ষ ৫০ হাজার ১৪০ জনকে।