সুরক্ষা-বেড়া: কন্টেনমেন্ট জ়োন। তাই গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে এলাকা। তা পেরিয়ে চলছে যাতায়াত। বুধবার ল্যান্সডাউন বাজারে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত রোখার লক্ষ্যে আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে যে নিয়ন্ত্রণবিধি চালু হচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে তার মেয়াদ সাত দিন। কোন কোন এলাকায় এই নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হবে, সেই কন্টেনমেন্ট জ়োনের জেলাভিত্তিক কিছু তালিকা বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। এই সব এলাকায় কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। তবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই নিয়ন্ত্রণে মানুষকে ‘ঘরবন্দি’ হতে হবে না। যদিও প্রশাসনের একাংশের মতে, সংক্রমণ ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব ধরনের গতিবিধিতে পুরোপুরি রাশ টানা হবে।
মঙ্গলবার জেলায় জেলায় (বিশেষ করে যেখানে সংক্রমণ বাড়ছে) নতুন কন্টেনমেন্ট বিধি তৈরি করে কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সে দিন সন্ধ্যায় প্রতিটি জেলাকে সেই সিদ্ধান্ত লিখিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, নতুন নির্দেশিত কন্টেনমেন্ট এলাকায় সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, জরুরি নয় এমন পরিষেবা, সমাবেশ, পরিবহণ, বাজার, শিল্প-বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের অফিসে না-গেলেও চলবে। ওই সব এলাকায় ঢোকা-বেরোনোর উপরে থাকবে কড়া নিয়ন্ত্রণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যতটা সম্ভব হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করবে স্থানীয় প্রশাসন।
বুধবার এর ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কন্টেনমেন্ট কিছু কিছু জায়গায় করছি। তার কারণ, কয়েকটা জায়গায় কোভিড রোগী আমরা বেশি পাচ্ছি। বার বার করে সকলকে অনুরোধ করছি মাস্ক পরার জন্য। আমার পাড়ায় একটা দোকান আছে, ১০ বার দিয়েছি, তা-ও কিছুতেই পরবে না। এদের ক্ষমা করা ছাড়া আমার কিছু করার নেই। কিছু কিছু ছোট ছোট কন্টেনমেন্ট করছি। ঘরবন্দি কোথায় হল। মানুষের স্বার্থে লকডাউন তো করতে হতেই পারে।’’
আরও পড়ুন: ফের লকডাউন কি সেই গোষ্ঠী সংক্রমণেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে
প্রশাসনিক ব্যাখ্যা, আগে রেড এলাকাকে ‘এ’ জ়োন বলা হত। ‘বি’ এলাকা ছিল বাফার জ়োন এবং সংক্রমণমুক্ত এলাকা ছিল ‘সি’ শ্রেণিভুক্ত। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এ এবং বি নিয়ে ছোট ছোট রাস্তা ব্যারিকেড হচ্ছে। না-হলে কমবে না। তমার (করোনায় সদ্যপ্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ) সঙ্গে প্রায় ৩০ জন আক্রান্ত হয়েছিল। তার পরে এরা লকডাউন ঠিকমতো করেছিল বলে গত ২০-২৫ দিনে একটাও হয়নি। আমার পাড়া গরিব পাড়া। ভাল করে একটু করলেই হয়।’’ তিনি জানান, সাত দিন এই ব্যবস্থা বহাল থাকবে। সাত দিন বাদে পর্যালোচনা হবে। কেস না-হলে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হবে। সংক্রমণ বাড়লে আবার বিবেচনা করা হবে।
আরও পড়ুন: কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কনটেনমেন্ট জোন কোনগুলি, দেখে নিন এক নজরে
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “পুলিশকে একটু শক্ত হতে বলো। মাস্ক পরে বেরোতে হবে। না-হলে পুলিশ বাড়ি পাঠিয়ে দেবে। জরিমানা কাজের কথা নয়। যাঁদের খাওয়ার ক্ষমতা নেই, তাঁদের কাছে জরিমানা হিসেবে দু’হাজার টাকা নেব? এটা তো সমস্যার সমাধান নয়।’’
সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কন্টেনমেন্ট এলাকার তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, তালিকা তৈরির পরে সমীক্ষা করা প্রয়োজন। তার পরে তা সরকারি ভাবে প্রকাশ করতে হবে। সেই মতো এ দিন কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার কন্টেনমেন্ট তালিকা প্রকাশ করেছে নবান্ন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তালিকা নিয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক শীর্ষকর্তাদের উদ্দেশে রুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখান (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) থেকে কোভিড বেরিয়েছে? কত বেড়েছে? কেস স্টাডি দরকার। ম্যাপ কোথায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তালিকা রিভিউ হবে। এই তালিকার সঙ্গে একমত নই। দিতে হয় দিয়েছে। ভোটার লিস্ট দেখে করেছে নাকি? অন্য জেলাগুলো নিয়ে কিছু বললাম না, কারণ তারা খেটে করেছে।’’
নতুন ব্যবস্থায় কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা কমেছে শহরে। মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশ এলাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োন ছিল ২৮টি। বুধবার তা হয়েছে ২৫। ওই সব এলাকায় কঠোর লকডাউন-নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন সিপি অনুজ শর্মা। কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য, এই রোগ যেন না-ছড়ায়। সেই কারণেই কন্টেনমেন্ট জ়োনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও আবাসনে বা বাড়িতে কেউ কোয়রান্টিনে থাকতে পারেন। তাঁরা বেরোতে পারবেন না। কিন্তু যাঁরা কন্টেনমেন্ট জ়োনে আছেন, তাঁরা সাবধানতা অবলম্বন করে বেরোতে পারেন।’’ পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, বাস চালানো নিয়ে কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি। বাস যেমন চলছে তেমনই চলবে বলে ওই সূত্রের দাবি।