ছবি: পিটিআই।
টানাপড়েন কাটিয়ে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক ও অন্যদের রাজ্যে ফেরাতে বিশেষ ট্রেন চালু হচ্ছে। রাজস্থানের অজমের শরিফ এবং কেরল থেকে প্রথম দু’টি ট্রেন আজ, সোমবার রওনা দেবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার রাতে টুইট করে বলেছেন, ‘‘অন্য রাজ্যে আটকে পড়া আমাদের রাজ্যের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির অঙ্গ হিসেবে কাল (সোমবার) অজমের ও কেরল থেকে ২৫০০-র বেশি পরিযায়ী শ্রমিক, তীর্থযাত্রী, ছাত্র-ছাত্রী ও রোগীদের নিয়ে দু’টি বিশেষ ট্রেন ছাড়বে। ফিরে আসা প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্যপরীক্ষা হবে প্রোটোকল মেনে।’’
লকডাউনের মধ্যে দীর্ঘ দিন ভিন্ রাজ্যে আটকে থেকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ও আর্থিক ভাবে দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিক, রোগী ও তাঁদের পরিজন, ছাত্র-ছাত্রী সকলেই এখন ঘরে ফিরতে উদগ্রীব। বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক মানুষদের কথা বলে চাপ বাড়াচ্ছে বিরোধীরাও। পরিস্থিতি বুঝে রাজ্য সরকারও তাঁদের ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে বাইরের রাজ্য থেকে আসা লোকজনের মাধ্যমে সংক্রমণ যে বেড়ে যেতে পারে, সেই আশঙ্কার কথা বিবেচনায় রেখে সতর্ক হয়ে পা ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেই কারণেই তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই বিষয়ে স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট তথ্য চাইছে। রাজস্থানের মুখ্যসচিব এবং কেরলের সংশ্লিষ্ট নোডাল অফিসারকে চিঠি দিয়ে এ দিন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় একই কথা বলেছেন। রাজস্থানের ট্রেনটি অজমের এবং কেরলের ট্রেনটি কোচি থেকে ছাড়ার কথা।
রেল সূত্রে বলা হচ্ছে, কোথা থেকে কোথায় ট্রেন যাবে, সেই ব্যাপারে রাজ্যগুলিই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে। তালিকা দেওয়া হচ্ছে রেলকে। তাদের বক্তব্য, ২৪ কামরার ওই বিশেষ ট্রেনগুলিতে ১২০০-র বেশি যাত্রী নেওয়া হবে না। যে রাজ্য থেকে ট্রেন ছাড়বে, সেই রাজ্যের প্রশাসনই সংশ্লিষ্ট ট্রেনের যাত্রী তালিকা তৈরি করে রেলকে দেবেন। ট্রেনে ওঠার সময়ে এক প্রস্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে, গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে আরও এক বার। ট্রেনের যাত্রা-সময় ১২ ঘণ্টার বেশি হলে এক বেলার খাবারের ব্যবস্থা রেল করবে। তবে স্লিপার ক্লাসের ভাড়া, সঙ্গে দু’রকম সারচার্জ মিলে আরও ৫০ টাকা করে মাসুল দিতে হবে সেই রাজ্য সরকারকে। যা নিয়ে আবার প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: কোভিড রেড জোনে বাড়ি! প্রসূতিকে ফেরাল পর পর কয়েকটি হাসপাতাল
রাজস্থানের মুখ্যসচিব প্রথমে বাংলার মুখ্যসচিবকে জানিয়েছিলেন, এ রাজ্যের শ্রমিকদের নিয়ে প্রথম ট্রেন রবিবারই সন্ধ্যায় রওনা দেবে। কিন্তু রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁকে চিঠি দিয়ে জানান, এমন সময়ে ট্রেন ছাড়া উচিত, যাতে দিন থাকতে থাকতেই এসে পৌঁছনো শ্রমিকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে তাঁদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়। স্টেশন থেকে শ্রমিকদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্যও রাজ্য প্রশাসনের সময় প্রয়োজন। একই ভাবে কেরলের আধিকারিককেও অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। পাশাপাশি, রেল সূত্রে বলা হয়েছে, রাজ্যের অনুরোধ মেনে অজমের থেকে আসা ট্রেন দুর্গাপুর ও ডানকুনিতে থামবে।
সফর-বিধি
• নির্দিষ্ট দু’টি রাজ্যের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ট্রেন। প্রত্যেক ট্রেনে রেলের নোডাল অফিসার।
• ট্রেনে ওঠার আগে শারীরিক পরীক্ষা। উপসর্গ না থাকলে অনুমতি।
• মাস্ক থাকা বাধ্যতামূলক।
• পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে সফর
• নন এসি ট্রেন
• ২৪ কামরার ট্রেনে গড়ে এক হাজার যাত্রী
রাজ্যগুলির মধ্যে এই প্রক্রিয়া চলাকালীনই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এ দিন টুইট করে জানিয়েছেন, রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁর দাবি, অজমের থেকে প্রথম ট্রেনটি আসানসোল হয়ে কাল, মঙ্গলবার দুর্গাপুর পর্যন্ত আসবে। যদিও রাজ্য বা রেল কোনও সূত্রেই দুর্গাপুর পর্যন্ত এমন কোনও ট্রেনের খবর মেলেনি। পাশাপাশিই বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন, ট্রেনে ফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা-সহ পরিকাঠামোগত যাবতীয় ব্যবস্থার দায়িত্ব যেখানে রাজ্য প্রশাসনের, সেখানে তাদের ‘অগোচরে’ রাজ্যপাল ট্রেনের বিষয়ে কী ভাবে রেলের সঙ্গে কথা বলে ‘বন্দোবস্ত’ করতে পারেন?
আরও পড়ুন: হাসপাতালে ফুল না ছড়িয়ে পিপিই পাঠান, তির বিঁধছে টুইটার
শ্রমিক-সহ আটকে থাকা লোকজনকে ফেরানোর ব্যবস্থা না-হলে আজ, সোমবারই আন্দোলনের কথা বলেছিল সব শ্রমিক সংগঠন। বিরোধীদের অভিযোগ, বাইরে থাকা লোকজনের জন্য রাজ্য যে হেল্পলাইন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়েছে, তাতে যোগাযোগ করে কোনও কাজ হচ্ছে না। বাম দলগুলির তরফে বিমান বসু এ দিন বলেছেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোর জন্য খরচের ভার কেন্দ্রকেই নিতে হবে। তাদের এই অবস্থায় ঘরে ফেরানোর জন্য টাকা নেওয়া অমানবিক! প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলে এত যে টাকা উঠছে, তা কোন কাজে লাগবে তা হলে?’’ সংক্রমণের আশঙ্কা যে উড়িয়ে দেওয়া চলে না, তা মেনে নিয়েই বিমানবাবুদের দাবি, বিশেষ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও প্রয়োজনে কোয়রান্টিন করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। একই সুর লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীরও। তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্যওয়াড়ি নোডাল অফিসার নিয়োগ করে গোটা প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ভাবে করার আর্জি জানাচ্ছি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। দায়িত্ব দিলে আমি এই কাজে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, কোনও কৃতিত্ব দাবি করব না। শুধু চাই বিপন্ন মানুষগুলো যাতে একটু আশ্বস্ত হতে পারেন।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)