প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শনিবারের বৈঠকে কলেজের পরীক্ষা লকডাউন ওঠার এক মাসের মধ্যে নেওয়া এবং হোম সেন্টার বা নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করার উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, লকডাউন পর্বে পঠনপাঠনের যে-ঘাটতি হয়েছে বা হয়ে চলেছে, তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য লকডাউনের পরে ও পরীক্ষার আগে পড়াশোনার কতটুকু সময় মিলবে? আদৌ মিলবে কি? নাকি যে-বিষয়ে যতটুকু পড়া হয়েছে, সেই আংশিক পাঠের ভিত্তিতেই পরীক্ষা নেওয়া হবে? যে-সব কলেজ ভবনে দু’টি বা তিনটি কলেজ রয়েছে, সেখানে হোম সেন্টার করে পরীক্ষা হবে কী ভাবে, সেই প্রশ্নটাও বড় হয়ে উঠছে।
শনিবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, লকডাউন শেষে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অন্তত এক মাস পরে পরীক্ষা নেওয়া হবে। ফাইনাল সিমেস্টার এবং চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষাই হবে আগে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু কলেজে সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় আলাদা তিনটি কলেজ চলে। কোথাও সকাল ও দুপুরে দু’টি কলেজের পঠনপাঠন হয়। তিনটি শিফটে পড়ুয়া প্রচুর। নিজেদের কলেজে পরীক্ষা হলে বসার জায়গা হবে কী করে?
শনিবারের বৈঠকে করোনা-আবহে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দু’-এক জন উপাচার্য অনলাইনে পরীক্ষার প্রসঙ্গ তুললে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা যে সম্ভব নয়, সেটা স্পষ্ট করে দেন শিক্ষামন্ত্রী। খাতায়-কলমে পরীক্ষা হলে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে বলে বৈঠকে মত প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা যাবে কি, উঠছে প্রশ্ন। ওয়েবকুটা-র সহ-সভাপতি প্রবোধ মিশ্র রবিবার বলেন, ‘‘একই ভবনে তিনটি কলেজ চললে হোম সেন্টার করার ক্ষেত্রে তিন সেট প্রশ্নপত্র চাই। সেটা কি সম্ভব? তেমন নিয়ম আছে কি?’’ এতে গণটোকাটুকির আশঙ্কাও আছে বলে মনে করেন প্রবোধবাবু।
আরও পড়ুন: ঘরে ফেরাতে অ্যাপ নিয়ে আসরে অধীর
ওই শিক্ষক-নেতার বক্তব্য, অনেক অধ্যক্ষ লকডাউন পর্বে পঠনপাঠন যাতে অব্যাহত রাখা যায়, তার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তেমন কিছু সুফল মেলেনি। অনলাইনে পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক কলেজ শুরু করলেও দেখা গিয়েছে, বহু পড়ুয়ার অনলাইনে পড়াশোনা করার সুযোগই নেই। হয় স্মার্টফোন নেই অথবা নেই দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা। ফলে অনলাইনে পঠনপাঠন সাফল্যের সঙ্গে চলছে, এটা বলা যাবে না। তা হলে কি লকডাউনের পরে এবং সিমেস্টার পরীক্ষার আগে পঠনপাঠনের কিছু সুযোগ থাকবে? ফাইনাল সিমেস্টারের এবং তৃতীয় বর্ষের পুরো পাঠ্যক্রম পড়ে পড়ুয়ারা পরীক্ষা দিতে পারবেন? নাকি আংশিক পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতেই তাঁদের পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া হবে?
আরও পড়ুন: মার্কিন মুলুকের চাকরি খুইয়ে আনাজ বিক্রি
মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজের বাড়িতে সকালে কাশীশ্বরী, দুপুরে মণীন্দ্র চন্দ্র এবং সন্ধ্যায় শ্রীশচন্দ্র কলেজ চলে। মণীন্দ্র চন্দ্রের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত জানান, তিন কলেজ মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা কমবেশি সাত হাজার। তিনটি শিফট থেকে পড়ুয়ারা একটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে এলে সংখ্যাটা কম হবে না। পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হবে না। তাঁর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজনে অধ্যক্ষদের সঙ্গেও কথা বলবে তারা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ (শিক্ষা) উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায় অধ্যক্ষদের ই-মেল পাঠিয়ে অনুরোধ করেছেন, তাঁরা যেন লকডাউন ওঠার ১০ দিনের মধ্যে কলেজ ভবন জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করেন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)