Coronavirus

মুম্বই-চেন্নাইয়ে রোগ সারাতে গিয়ে ঘরবন্দি

চিকিৎসার জন্য চেন্নাই, বেঙ্গালুরু গিয়েও আটকে পড়েছেন বহু বাঙালি।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৩৮
Share:

লকডাউন মুম্বই। —ফাইল চিত্র

দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত স্বজনদের নিয়ে নিরাময়ের আশায় তাঁরা ছুটে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ের হাসপাতালে। আর এক মারণ ব্যাধির চোখরাঙানিতে পীড়িত আত্মীয়দের নিয়ে ঘরে ফেরা আপাতত আটকে গিয়েছে তাঁদের।

Advertisement

ব্যারাকপুরের রমা চট্টোপাধ্যায়ের উনিশ বছরের ছেলে তিন বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছেন। সম্প্রতি ক্যানসার ধরা পড়েছে তাঁর স্বামীরও। দুই রোগীকে নিয়ে মুম্বইয়ে টাটা ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন রমাদেবী। করোনার থাবা থেকে বাঁচার আশায় ঘোষিত লকডাউনে সড়ক, রেল ও আকাশ— সব পথেই যে চলাচল বন্ধ! বাগনানের বলাই রায়ও ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রী মৌমিতাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য মুম্বইয়ের ওই হাসপাতালে গিয়ে আটকে পড়েছেন। বলাইবাবু, রমাদেবীরা জানাচ্ছেন, টাটা ক্যানসার হাসপাতালে আত্মীয়স্বজনের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়েছে এই ধরনের বেশ কিছু বাঙালি পরিবার।

মুম্বই থেকে ফোনে রমাদেবী বলেন, ‘‘২০১৬ সালে আমার ছেলের মুখের ভিতরে ক্যানসার ধরা পড়ে। তার পরে চিকিৎসায় অনেকটা সেরেও গিয়েছিল। কিন্তু তিন বছর পরে ক্যানসার আবার ওর ফুসফুসে ছাড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যায়। কয়েক মাস আগে আমার স্বামীর রেক্টাম ক্যানসার ধরা পড়ে।’’ স্বামী ও ছেলের চিকিৎসা করাতে রমাদেবী মুম্বই গিয়েছেন দাদা আর জামাইবাবুকে নিয়ে। তাঁর দাদা ও জামাইবাবুর ব্যারাকপুরে ফিরে আসার কথা ছিল। রমাদেবী বলেন, ‘‘রোজ ১০০০ টাকা ঘরভাড়া দিতে হচ্ছে। আমার স্বামী গৃহশিক্ষক। চিকিৎসার এত খরচ। লকডাউন বেশি দিন চললে কোথা থেকে এত টাকা জোগাড় করব, বলুন। কোনও ভাবে দাদা-জামাইবাবুর ফেরার ব্যবস্থা করা যায় কি?’’

Advertisement

বাগনানের বাসিন্দা বলাইবাবু জানান, তাঁর স্ত্রী মৌমিতার ফুসফুসে ক্যানসার। ২৩টা কেমো হয়ে গিয়েছে। বলাইবাবু বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, বাকি কেমোগুলো কলকাতায় গিয়ে দেব। কিন্তু লকডাউনে আটকে গেলাম। প্রতিদিন ৫০০ টাকা ঘরভাড়া লাগছে। কী ভাবে যে এত সব খরচ সামলাব, বুঝে উঠতে পারছি না।’’

লকডাউনের জন্য বেশির ভাগ খাবার জায়গা বন্ধ। বলাইবাবু, রমাদেবীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের মতো আটকে পড়া বহু ক্যানসার রোগী এবং তাঁদের পরিজনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মুম্বইয়ের বাঙালিদের একটি ক্লাব। রোজ দুপুরে ওই ক্লাবের তরফে খিচুড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই ক্লাবের তরফে জয় চক্রবর্তী, বুলবুল রায়, শঙ্কর খাঁড়া জানান, এই অসহায় মানুষগুলির মুখে অন্তত এক বেলা অন্ন তুলে দিতে চান তাঁরা।

চিকিৎসার জন্য চেন্নাই, বেঙ্গালুরু গিয়েও আটকে পড়েছেন বহু বাঙালি। পূর্ব বর্ধমানের নারিচা গ্রামের কৃষক তারকনাথ ঘোষ ফোনে জানান, তিনি কিডনির চিকিৎসা করতে চেন্নাই গিয়েছেন। ট্রেনে ফেরার কথা ছিল। ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটকে যান। ‘‘হাত ফাঁকা। আত্মীয়দের পাঠানো টাকায় কিছু দিন চলেছে। তা-ও শেষ। চেন্নাইয়ের বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন তাদের গেস্ট হাউসে থাকতে দিয়েছে। স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই আছি। কত দিন এ ভাবে থাকতে হবে, জানি না,’’ অসহায় শোনাল তারকবাবুর গলা।

চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আত্মীয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়েছেন দুর্গাপুরের বিশ্বজিৎ মণ্ডল। তিনি বললেন, ‘‘বহু বাঙালি চিকিৎসা করাতে এসে এখানে আটকে পড়েছেন। থাকার জায়গা নেই। খাবার জুটছে না ঠিকমতো।’’ বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের ট্রাস্টি মলয় রায় বলেন, ‘‘আমাদের অতিথি নিবাসে বেশ কয়েক জন রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়ের নিখরচায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। খবর পাচ্ছি, আরও অনেকে এ-দিকে ও-দিকে আটকে পড়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement