West Bengal Lockdown

আচমকা রাতে মতবদল, ২ ও ৯ অগস্ট লকডাউন নয় রাজ্যে

ইদ এবং রাখির দিন লকডাউন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ১৭:০৭
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অগস্ট মাস জুড়ে লকডাউনের দিন ঘোষণা করেও একই দিনে তাতে দু’বার সংশোধন করল রাজ্য সরকার। রাজ্যে ফের লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিল নবান্ন। তবে মঙ্গলবার বিকেলে তাতে এক প্রস্থ সংশোধন হয়। এর পর এ দিন রাতে ফের তাতে পরিবর্তন করে রাজ্য প্রশাসন। ফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত ৯ দিন থেকে কমে অগস্টে সম্পূর্ণ লকডাউন হল ৭ দিন।

Advertisement

রাজ্য সরকারের আগের ঘোষণা মতো ৩১ জুলাই পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা ছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, আগামী ৩১ অগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে লকডাউন চলবে। কবে কবে সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে, তার দিন ক্ষণও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জুলাই মাসের শেষ সম্পূর্ণ লকডাউন আগামিকাল বুধবার। তার পর অগস্ট জুড়ে সব মিলিয়ে মোট ৭ দিন সম্পূর্ণ লকডাউন হবে রাজ্যে। তবে প্রাথমিক ভাবে ৯ দিন সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করলেও বিকেলে তাতে বদল করা হয়। রাতে আচমকা সেই সিদ্ধান্তে ফের রদবদল করা হয়। স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে টুইট করে জানানো হয়, রাজ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে অনুরোধের ভিত্তিতে আগামী ২ এবং ৯ অগস্টের পূর্বনির্ধারিত লকডাউনের সিদ্ধান্ত রদ করা হয়েছে। অর্থাৎ ওই দু’দিন রাজ্যে লকডাউন কার্যকর করা হবে না।

৯ অগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস। প্রশাসনের একাংশের সূত্রে খবর, ওই দিন লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনগুলির তরফ থেকে তা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ আসতে থাকে। এর রাতে লকডাউনের দিনের তালিকায় পরিবর্তন করা হয়। আদিবাসী সংগঠনের অনুরোধের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্তে এই রদবদল করা হয়েছে বলেই মনে করছে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ।

Advertisement

আজ নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, “আগামিকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন থাকছে। শনিবার ইদ, সোমবার রাখি। তাই রবিবার লকডাউন হবে। এ ছাড়া ৫, ৮, ১৬, ১৭, ২৩, ২৪, ৩১ অগস্ট সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে। এই সময় যে ভাবে নিয়ম মানা হচ্ছিল, তেমনই মানতে হবে।’’

অগস্ট মাসে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সেই সময়টা অবহেলা করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী আজ বলেন, ‘‘এখানে ৩১ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন ছিল। এ বার আমরা তা বাড়িয়ে ৩১ অগস্ট করে দিচ্ছি। এই সময় কালে যে ভাবে ভোর ৫টা পর্যন্ত নিয়মবিধি মানা হচ্ছিল, তা হবে। আর সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে সম্পূর্ণ লকডাউন করা হবে। ওই দিনগুলোয় ট্রেন এবং প্লেন চলবে না।”

মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: করোনা উপসর্গে বাড়িতে বসে টেস্ট, ‘ডেট’ পেতে চরম ভোগান্তি রোগীর​

রাজ্যে স্কুল কলেজ আপাতত ৩১ অগস্ট বন্ধ থাকবেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদি অগস্ট মাসে পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তবে শিক্ষক দিবস অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল চালু করার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা পরিকল্পনা করছি, পুজোর আগে পর্যন্ত এক দিন অন্তর এক দিন স্কুল চালানোর। তবে সবটাই নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর। অগস্ট মাসে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা খতিয়ে দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

যে আট জেলায় করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, সেই জেলাগুলিতে কোভিড যুদ্ধ তদারকির জন্য আট জন আইএএস-কে নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে বলেও আজ জানান মুখ্যমন্ত্রী। এত দিন পাঁচটি জেলায় নোডাল অফিসার ছিলেন। এ ছাড়াও রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি সামলাতে আটটি আলাদা আলাদা দল গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই দলগুলো কোভিড মোকাবিলার পরিকাঠামো থেকে শুরু করে সেফ হোম, মৃতদেহ সৎকার, টেলি মেডিসিন— সমস্ত কিছু দেখবে। এই আমলারা রাজ্যের অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং শীর্ষ স্তরের।’’

আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের লাল সতর্কতা, প্রবল বৃষ্টি চলবে আরও তিনদিন, ধসের আশঙ্কা​

নবান্নের তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, ১৫ অগস্টের মধ্যে প্রতি দিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার করা হয়েছে। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে ২ লাখ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা কার পরিকল্পনাও রাজ্যের রয়েছে বলে জানানো হয়। করোনার পাশাপাশি এ দিন রাজ্যবাসীকে ডেঙ্গু নিয়েও সচেতন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “কোথাও জল জমতে দেবেন না। ঘরের আশপাশ পরিষ্কার রাখবেন। সাবধানে থাকবেন।”

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement