Coronavirus Lockdown

ভেলোরে আটকে বাবা-মা, বাড়িতে কান্না দুই সন্তানের

শর্মিষ্ঠা জানান, তেহট্টের বাড়িতে তাঁর বাবা-মা ছেলে-মেয়ের দেখাশোনা করছেন। তবে চিন্তা যাচ্ছে না। 

Advertisement

সাগর হালদার 

তেহট্ট শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৫৫
Share:

ভেলোরে অভিজিৎ ও শর্মিষ্ঠা। ডান দিকে, বাড়িতে দুই খুদে। নিজস্ব চিত্র

তেহট্টের বাড়িতে ফোন করলেই কান্না ভেসে আসে। আর তার সঙ্গে নানা রকমের আবদার।

Advertisement

“মা, তোমরা কবে আসবে? বাবাকে বলো না, তাড়াতাড়ি তোমায় নিয়ে বাড়ি ফিরতে।...” এই টুকু বলেই গলা ধরে আসে। কান্না শুরু করে দেয় পাঁচ বছরের ছোট্ট অস্মিতা ভৌমিক।

অতটুকু বোনের মতো কথায় কথায় কেঁদে ফেলতে পারে না দাদা। কোনও ক্রমে কান্না চেপে বাবার কাছে জানতে চায় আর কত দিন লকডাউন চলবে? কবে মায়ের কোল ঘেঁষে একটু ঘুমোবে ওরা। কথাগুলো বলার সময়ে চোখের কোণ দিয়ে অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ে বছর তেরোর অঙ্কুজিৎ ভৌমিকের।

Advertisement

ওরা দুই খুদে ৫ মার্চ থেকে বাবা-মাকে ছাড়াই রয়েছে তেহট্টের বাড়িতে। বাবা-মা আটকে আছে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের এক শহর ভেলোরে। অসুস্থ স্ত্রী শর্মিষ্ঠার চিকিৎসা করাতে তেহট্ট বাজারের বাড়ি থেকে সেখানে গিয়েছিলেন অভিজিৎ ভৌমিক। সঙ্গে ছিলেন শর্মিষ্ঠার দাদা শ্যামল মণ্ডল। এখন লকডাউনে আটকে আছেন সেখানেই। এ দিকে তেহট্টের বাড়িতে বাবা-মাকে ছাড়া দিন কাটাচ্ছে দুটো ছোট বাচ্চা।

পেশায় শিক্ষক অভিজিৎ স্ত্রীয়ের কিডনি সমস্যা নিয়ে দক্ষিণ ভারতের ওই শহরে চিকিৎসার জন্য যান। ৫ মার্চ থেকে তাঁরা সেখানে রয়েছেন। ১৮ মার্চ সকালে চিকিৎসা শেষ হয়। সেই দিনই ট্রেনের তৎকাল টিকিট কাটতে গেলে তাঁরা টিকিট পাননি। পরে ২০ তারিখ টিকিট কাটলেও ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে শুরু হয়ে যায় জনতা কার্ফু, লকডাউন। ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁদের আর ফেরা হয় না।

এ দিন অভিজিৎ ফোনে ভেল্লোর থেকে জানান, ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও হয়নি। পরে ব্যাঙ্ক থেকে দু’বার ১০৫০০ ও ২১০০০ টাকা তোলেন। যা দিয়ে সেখানকার হোটেল ভাড়া ও খাওয়া খরচ চলছিল এত দিন। কিন্তু টানা লকডাউনে রীতিমতো আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে বর্তমানে। অভিজিৎ আরও জানাচ্ছেন, তাঁর স্ত্রীয়ের কিডনিতে পাথর হওয়ায় চিকিৎসক নির্দিষ্ট খাবারের তালিকা করে দিয়েছেন। কিন্তু লকডাউনে এবং হোটেলে থেকে ঠিক সময়ে ঠিক ডায়েট মেনে চলা যাচ্ছে না। অভিজিতের কথায়, ‘‘টাকাপয়সা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু বাড়িতে ছেলে-মেয়ে এই সময়ে আমাদের থেকে দূরে রয়েছে। চিন্তায় ঘুম আসছে না।’’

শর্মিষ্ঠা জানান, তেহট্টের বাড়িতে তাঁর বাবা-মা ছেলে-মেয়ের দেখাশোনা করছেন। তবে চিন্তা যাচ্ছে না।

শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘‘এত দিন ধরে আমাদের দেখতে না পেয়ে বাচ্চারা সারা ক্ষণ কান্নাকাটি করছে।’’ তাই যে ভাবে হোক, বাড়ি ফিরতে চান তাঁরা। অভিজিৎ রবিবার সকালে নদিয়ার জেলাশাসক এই মর্মে একটি আবেদনপত্র লিখে হোয়াটসঅ্যাপও করেন। ফোনে কথাও হয় তাঁদের।

জেলাশাসক বিভু গোয়েল তাঁদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন, একটি দল পরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা করবে।

তত দিন পর্যন্ত ফোনের এ প্রান্ত থেকে কান্নাভেজা গলার প্রশ্নে ও প্রান্তের নীরব থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement