West Bengal Covid

West Bengal Covid: আবার শুরু অল্প অল্প রোগের গল্প, ধীরে হলেও হাসপাতালে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা

এম আর বাঙুরের সুপার শিশির নস্কর বলছেন, ‘‘কোভিড রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। উৎসবের কারণেই এই বৃদ্ধি কি না, তা আরও এক সপ্তাহ পর বোঝা যাবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৩৬
Share:

রাজ্যে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। ফাইল চিত্র

তেমন ভাবে ঢেউ না এলেও রাজ্যে ধীরে ধীরে বাড়ছে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালগুলিতেও বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগী ভর্তি। অথচ গত এক সপ্তাহ আগেও চিত্রটা ছিল অন্য রকম। সাত দিন আগে যেখানে রাজ্য জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০-র আশপাশে ছিল, এখন সেটাই হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সব দেখে চিকিৎসক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, উৎসবমুখর বাঙালিকে এ বার ভিড়ের মূল্য চোকাতে হবে!

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৩০। মাঝখানের দু’দিন সামান্য কমলেও রবিবার থেকে তা ফের ঊর্ধ্বমুখী। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, রবিবার রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২৪। সোমবার তা বেড়ে হয় ৬৯০। এবং মঙ্গলবার সেই সংখ্যাই পৌঁছয় ৭২৬-এ। বুধবার আবার এক লাফে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬৭। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শহর কলকাতার। গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় করোনা সংক্রমণ ছিল ১০২। বুধবার তা পৌঁছেছে ২৪৪-এ। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন শহরে। পুরসভার দেওয়া তথ্যে সব থেকে উদ্বেগের বিষয়, দ্বিতীয় টিকা নেওয়ার পরেও শুধু কলকাতায় ১৬৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসক মহলও।

সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি কলকাতা-সহ রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে বাড়ছে রোগী ভর্তির সংখ্যাও। সংক্রমিতদের অনেকে যদিও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। থাকছেন না নিভৃতবাসেও। ফলে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ছে। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে গত মাসের তুলনায় এ মাসে অনেক বেশি সংখ্যক কোভিড রোগী ভর্তি হয়েছেন। শুধু ওই হাসপাতালেই জ্বর-সর্দির উপসর্গ নিয়ে আসা প্রায় ১২ শতাংশ রোগীর কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। গত মাসে যা ছিল মাত্র ২ শতাংশ। সরকারি হাসপাতালগুলিতেও একই অবস্থা। দু’মাস আগে এম আর বাঙুর হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ৪০ জন কোভিড রোগী ভর্তি হতেন। গত কয়েক সপ্তাহে সেই গড় বেড়ে ১০০ ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে আবার ৪০ শতাংশ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখন তাদের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা চলছে।

Advertisement

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ রাজ্য-সহ গোটা দেশে চিকিৎসা সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। অক্সিজেনের পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতে শয্যার অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছিল। ওই সময় মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়। তার পরেও রাজ্য জুড়ে কোভিড বিধি উপেক্ষা করেই উৎসবের মেজাজে গা ভাসিয়েছে বাঙালি। কেনাকাটা থেকে শুরু করে পুজো মণ্ডপগুলিতে ভিড় সে কথাই বলছে। বিশেষজ্ঞেরা বার বার সতর্ক করা স্বত্ত্বেও অনেকে তা মানেননি। এমনকি মাস্ক ছাড়াই ভিড়ের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর ছবি দেখা গিয়েছে। এখন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। যা দেখে চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, পুজোর আনন্দই খাল কেটে কুমির এনেছে। বিশেষজ্ঞরা আগেই সাবধান বাণী শুনিয়েছিলেন— করোনা শেষ হয়ে যায়নি। আপতত সবাইকেই সাবধানে থাকতে হবে।

বাড়তে থাকা করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এম আর বাঙুরের সুপার শিশির নস্কর বলছেন, ‘‘উৎসবমুখর মানুষ বেলাগাম ভাবে আনন্দে মেতেছেন। কোভিডবিধি মানেনি। আগের থেকে কোভিড রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। তবে উৎসবের কারণেই এই বৃদ্ধি কি না, তা আরও এক সপ্তাহ পর বোঝা যাবে।’’

প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। তাঁর দাবি, ‘‘উৎসবের প্রভাবেই যে করোনা বেড়েছে এখনই তা বলার মতো সময় আসেনি।’’

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের কোভিডের নোডাল অফিসার কৌশিক চৌধুরীর মতে, ‘‘সংক্রমণের হার যে বাড়ছে তা বোঝাই যাচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এখানে রোগী রেফার হয়ে আসছেন। তাঁদের বেশিরভাগের অবস্থা গুরুতর।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement