বিধি না মেনেই চলছে কেনাকাটা। অনেকের মুখে মাস্কও নেই। ছবি: এএফপি।
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, মাস্কবিহীন শির, হাসপাতালে বেড নেই, গড়িয়াহাটে ভিড়...
মুঠোফোনে ঘুরছে ‘ডাক্তারদের নতুন ছড়া’। ভাইরাল ক’লাইনে কেবল গড়িয়াহাটের কথা থাকলেও শুধু গড়িয়াহাট নয়, হাতিবাগান, নিউমার্কেট— মহানগরের বড় বাজারের সর্বত্রই ভিড় দেখা যাচ্ছিল রোজ। সেই ভিড় দেখেই সমাজমাধ্যমে এমন আশঙ্কার প্রকাশ দেখা গিয়েছে নানা ছন্দে, ছবিতে।
কেবল আশঙ্কা নয়, হাইকোর্টের রায়ে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় আশাও প্রকাশ করেছেন অনেকে। শিল্পী মহফুজ আলির তুলিতে ফুটেছে ২০২০-র সেরা শারদ সম্মানের প্রাপক হিসেবে হাইকোর্টের ভবনের ছবি। সামনে দূরত্ব-বিধি মেনে মাটিতে আঁকা বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে জনতা। আশা-আশঙ্কার এই আবহে বাঙালির রসবোধের বাহন হয়েছে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ। ‘হাইকোর্ট দেখে’ ভরসা পাওয়া বাঙালিই হোক বা ভিড় দেখে ভীত হওয়া বাঙালি— সবার মনের কথাই উঠে এসছে ছড়া-ছবিতে। ছড়িয়ে পড়ছে মিম রূপে।
আরও পড়ুন: শখ করে রোগ না-বাধিয়ে আমাকে দেখুন
আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতালে ২১৭৪ নতুন শয্যা
মাস্ক ঢাকা নাকে পুজো-পুজো গন্ধ পেতেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল বাজারে। ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়েছিল করোনাকালে পুজো-পরিকল্পনা— সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে নানা পুজোর নাম, আর দশমীতে বেলেঘাটা আইডি। সমাজমাধ্যমে ঘুরেছে, ‘যায় যদি যাক প্রাণ, জুতো কিনে বাড়ি যান’-এর মতো লাইন।
মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এমন ছড়ার মাধ্যমে রঙ্গ-রসিকতার একটা ইতিবাচক দিকও আছে। এগুলো যেহেতু দ্রুত অনেক মানুষের কাছে পৌঁছয়, তাই এর মাধ্যমে সচেতনতার নির্মাণ হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে অনেক সময় দীর্ঘ আলোচনার চেয়ে এমন আকর্ষক ছড়া বেশি কার্যকর হয়। তাই ‘হাসপাতালে বেড নেই, গড়িয়াহাটে ভিড়’ পড়ে যদি কেউ সচেতন হন, ভিড় না-করেন, তা হলে তা এই পরিস্থিতিতে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।’’
করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিকে, যখন এর প্রভাব সম্বন্ধে তেমন সম্যক ধারণা অনুমান করতে পারেননি কেউ তখনও এমন রসিকতা দেখা গিয়েছিল। ভিড় এড়িয়ে চলার প্রসঙ্গ টেনেই সপ্তপদীর অমর সংলাপ, ‘‘ও যেন আমাকে টাচ না করে!’’ ঘুরেছিল মোবাইলে। বিপদের গুরুত্ব বুঝে রঙ্গ-রসিকতার হিড়িক মাঝে কমেছিল। এখন ‘মিম’ অনেকটাই সচেতনতার। মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, আমরা যে বক্তব্যের সঙ্গে একমত হই, সেই সব বক্তব্যই অন্যকে জানাতে চাই। ফেসবুকে বাজারের ভিড় দেখে হতাশ হওয়া ডাক্তারের ছবি, টুইটারে দেবী দুর্গার আদলে চিকিৎসারত ডাক্তারের ছবি শেয়ার করেছেন অনেকে। তাই এতে যদি ডাক্তারদের সাবধানবাণী মানুষ শোনেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন তা হলে লাভ সাধারণ মানুষেরই।
সাবধানবাণীও দিচ্ছেন অনুত্তমা। বলছেন, ‘‘যদি এই বার্তা অন্যকে পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ থাকে, বাস্তবে অনুসরণ না-করা হয়, তা হলে তার কোনও গুরুত্ব থাকবে না।’’ ভাইরাল হওয়া মগনলাল মেঘরাজের সংলাপেও যেন তারই প্রতিধ্বনি, ‘‘পুজা মার্কেটিং কোরছেন কোরেন, লেকিন আপনার সেফটির গ্যারান্টি হামি দিতে পারব না।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)