ছবি: পিটিআই।
মানবিক কারণে কোটা থেকে পড়ুয়াদের ফেরাতে হয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদেরও রাজ্যে ফেরার ছাড়পত্র দিয়ে ট্রেনের বন্দোবস্ত করেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে এক ধাক্কায় সংক্রমণের হার অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাইছে, কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের ফেরানোর আগে সরাসরি রাজ্যের সঙ্গে কথা বলুক। সে ক্ষেত্রে রাজ্য কেন্দ্রের সঙ্গে ‘ফেস টু ফেস’ কথা বলে বুঝে নেবে, কোন রাজ্য থেকে কত শ্রমিককে কখন রাজ্যে ফেরানো হবে। রাজ্য নিজের সুবিধা মতো বলে দেবে, কোন রাজ্যের শ্রমিকদের আগে ফেরানো হবে, কোন রাজ্যের শ্রমিকেরা পরে আসবেন। ধাপে ধাপে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা ট্রেনে করে ফিরলে, হাতে সময়ও মিলবে। সুষ্ঠু ভাবে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, বাড়ি পৌঁছে দেওয়া ও দরকার মতো কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা করতে পারবে রাজ্য।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, শ্রমিকেরা ফিরলে সংক্রমণ আরও ছড়ানোর আশঙ্কা করছে সব রাজ্যই। এই আশঙ্কা যে কতটা সত্যি, তার প্রমাণ হল, আজ মহারাষ্ট্র থেকে উত্তরপ্রদেশে ফেরা সাত জন দিনমজুরের করোনা পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ মিলেছে। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বস্তির এই সব শ্রমিকদের একটি কলেজে কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে। যাঁরা এঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করার কাজ চলছে। কিন্তু আসার সময়ও পথে এঁদের থেকে অনেকের সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, গোটা দেশেই উপসর্গহীন সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি। কোথাও কোথাও তা ৬৯ শতাংশের মতো। ঠিক মতো পরীক্ষা না হলে গ্রামগুলিতেও সংক্রমণের আশঙ্কা ছড়াবে। গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে। অর্থনীতিবিদ তথা সমাজকর্মী জঁ দ্রেজেরও আশঙ্কা, এ ভাবে শারীরিক পরীক্ষা ছাড়া ওই কর্মীরা নিজের নিজের রাজ্যে পৌঁছলে, সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানোর সম্ভাবনা। সেটা রুখতে গেলে এক ধাক্কায় বিপুল সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা, প্রয়োজনে কোয়রান্টিনের বন্দোবস্ত করতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে। বস্তুত এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থান ছিল, শ্রমিক, তীর্থযাত্রী, পর্যটক বা ভিন্ রাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়া মানুষেরা যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। একই যুক্তিতে কোটার পড়ুয়াদেরও ফেরাতে চায়নি পশ্চিমবঙ্গ।
আরও পড়ুন: এ বঙ্গে কিসে কিসে ছাড়? রাজ্যের সিদ্ধান্ত সোমবার
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, মুশকিল হল, অন্য রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকেরা ত্রাণ শিবিরে আর পড়ে থাকতে চাইছেন না। তাঁদের হাতের টাকাও ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই তাঁরা ঘরে ফিরতে মরিয়া। ‘স্ট্র্যান্ডেড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ৫ সপ্তাহ লকডাউনে কাটানোর পরে ৬৪ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকের হাতে ১০০ টাকাও নেই। ৯৭ শতাংশের বেশি শ্রমিক সরকারের থেকে কোনও নগদ সাহায্য পাননি। ৭৮ শতাংশ কোনও মজুরি পাননি। ১৬ শতাংশ আংশিক মজুরি পেয়েছেন। হকার, ঠেলাওয়ালা, রিকশাওয়ালাদের ৯৯ শতাংশের কোনও রোজগার হয়নি। সমীক্ষায় ৫০ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে ১ দিনের মতো রেশন রয়েছে।
রাজ্যের যুক্তি, শ্রমিকদের সমস্যা বুঝে অন্য রাজ্যে থাকা এ রাজ্যের নাগরিকদের খাইখরচের চেষ্টা করেছে নবান্ন। ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের জন্যও বাংলায় ৭১১টি শিবির খোলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথমে শ্রমিক বা কোটার পড়ুয়াদের না ফেরালেও অন্য রাজ্যগুলি কোটায় আটকে থাকা পড়ুয়াদের ফেরাতে শুরু করলে এ রাজ্যেও পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা আর্জি জানাতে শুরু করেন। তা ছাড়া খাওয়াদাওয়ার সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। রাজস্থান সরকারও চাইছিল, ওই পড়ুয়ারা নিজেদের রাজ্যে ফিরে যাক। এই অবস্থায় মানবিক কারণেই ৫ কোটি টাকা খরচ করে পড়ুয়াদের বাসে ফেরানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কত জনের বাড়িতে সেই বন্দোবস্ত রয়েছে, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি রয়েছে বা থাকলেও নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, কোনও প্রশাসনের পক্ষেই তা নিয়ে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। ফলে ঝুঁকির দিকটা অস্বীকার করা যায় না।
রাজ্যের যুক্তি, এর পরে লাখো লাখো শ্রমিক ফিরতে শুরু করলে এই সমস্যাই আরও বহু গুণে বেড়ে যাবে। সে কারণেই রাজ্য চাইছে, কেন্দ্র কথা বলে এগোক। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান হল, লোক জনকে ঘরে ফেরানোর বিষয়ে রাজ্যগুলি নিজেদের মধ্যে কথা বলুক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাইছে, কেন্দ্র এ বিষয়ে সমন্বয়ের দায়িত্ব নিক এবং কেন্দ্র সরাসরি রাজ্যের সঙ্গে কথা বলুক।
আরও পড়ুন: বঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৫, এনআরএসে সংক্রমিত ৯
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)