ফাইল চিত্র।
ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল সোমবারেই। মঙ্গলবার বাড়িতে করোনা রোগীর চিকিৎসা-নির্দেশিকা দেওয়া হল।
কেন্দ্রের নির্দেশিকার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, উপসর্গহীন এবং অল্প উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিরা চাইলে বাড়িতে থেকে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। তবে আক্রান্তের বাড়িতে প্রোটোকল মেনে আইসোলেশনে থাকার মতো জায়গা থাকতে হবে। এবং তিনি যে প্রোটোকলের অন্যথা করবেন না, হলফনামা দিতে হবে সেই বিষয়ে।
কেন্দ্র-রাজ্যের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের একাংশ। নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে সারা দেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর পরিসংখ্যান তুলে ধরছেন তাঁরা। ন্যাশনাল হেল্থ প্রোফাইলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা দেশের হাসপাতালে শয্যা-সংখ্যা ৭,১৩,৯৮৬। যা প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার ০.৫৫%। বঙ্গের ক্ষেত্রে ২.২৫%।
আরও পড়ুন: করোনা রিপোর্ট ‘ফলস’ নেগেটিভ বা পজ়িটিভ, সতর্ক ডাক্তার
কোভিড পরিস্থিতিতে দেশে কত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল আছে, কত শয্যা, আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর রয়েছে, সেই বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জনস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’। সিডিডিইপি বলছে, পশ্চিমবঙ্গে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২২৬৩টি হাসপাতাল রয়েছে। শয্যা-সংখ্যা ১,১৩,৫৩৫। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট আইসিইউ শয্যা ৫৬৭৭টি। একই মাপকাঠিতে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ২৮৩৮।
ঘরে থেকে করোনা-চিকিৎসার নির্দেশিকা
কাদের জন্য?
• করোনা পজ়িটিভ হলেও সে ভাবে উপসর্গ (মাইল্ড সিম্পটোমেটিক) নেই অথবা উপসর্গহীন (প্রি-সিম্পটোমেটিক) আক্রান্তেরা। তবে বাড়িতে রোগীকে আলাদা রাখার মতো জায়গা থাকতে হবে।
হোম আইসোলেশনের মাপকাঠি
• উপসর্গের মাত্রা কেমন তা ঠিক করবেন চিকিৎসক
• পরিবারের কেউ সংস্পর্শে এলে তাঁকেও বাড়িতে কোয়রান্টিনে রাখার সুবিধা থাকতে হবে
• রোগীর পরিচর্যায় চব্বিশ ঘণ্টার কেয়ার-গিভার। তিনিই হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন
• আক্রান্তের কাছাকাছি আসা সকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সেবন করবেন
• আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোডের পরামর্শ
• স্বাস্থ্য সম্পর্কে করোনা রোগী প্রতিদিন জেলা আধিকারিককে জানাবেন
• করোনা আক্রান্তকে হলফনামা দিতে হবে
হাসপাতালে ভর্তি কখন
• রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে
• বুকে চাপ অনুভব করলে
• আক্রান্ত সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে বা ভুল বকলে
• মুখে-ঠোঁটে নীলচে ভাব
• চিকিৎসক বললে
আক্রান্ত যা মেনে চলবেন
• সর্বক্ষণ ত্রিস্তরীয় মাস্ক পরে থাকবেন। সাধারণত আট ঘণ্টা, ভিজে গেলে তার আগেই বদলাতে হবে মাস্ক। ১% সোডিয়াম হাইপো-ক্লোরাইট দিয়ে ব্যবহৃত মাস্ক নষ্ট করতে হবে
• ঘরেই থাকবেন। কারও সঙ্গে মেলামেশা করবেন না
• প্রচুর পরিমাণে জল খাবেন
• ব্যবহৃত সামগ্রী অন্যদের সঙ্গে ভাগ করবেন না
• রোগীর ঘরের দরজার হাতল, জানলার অংশ ১% হাইপোক্লোরাইট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে
• মাঝেমধ্যেই চল্লিশ সেকেন্ড ধরে সাবান বা অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত ধুতে হবে
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় শয্যা আছে তিনটি। প্রতি এক লক্ষে আইসিইউ বা সিসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৫। সেখানে এই পরিকাঠামোতেও করোনা রোগীদের পরিষেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। এ দেশে যেখানে জনসংখ্যার তুলনায় শয্যা এবং সিসিইউ শয্যার সংখ্যা আরও কম, তাই স্বাস্থ্য-সম্পদ যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা উচিত।
আরও পড়ুন: নোটবন্দিতেও চালু ছিল বিনিময় প্রথা, লকডাউনে সে সব বাতিল বাঁকুড়ায়
বেলেঘাটা আইডি-র মেডিসিন বিভাগের প্রধান বিশ্বনাথ শর্মা সরকার জানান, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা যা, তাতে পরিষেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু আগামী দিনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ভেবে রাখা জরুরি। তাঁর বক্তব্য, করোনা পজ়িটিভ আইসোলেশন ওয়ার্ডে দু’টি শয্যার মধ্যে অন্তত দেড় মিটার ব্যবধান রাখতে হয়। ফলে চাইলেই শয্যা বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘ সময় ধরে রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয়। তাই রোগী বাড়লে শয্যা-সঙ্কটের আশঙ্কা অমূলক নয়। একই সঙ্গে তিনি জানান, এই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীর মানসিক প্রস্তুতি কতখানি, সেটা দেখাও জরুরি।
স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে সম্প্রতি টেলি-মেডিসিন চালু করার বিষয়ে দফতরের অভ্যন্তরে একটি নির্দেশিকা দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, দুই মেদিনীপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের জন্য কয়েক জন চিকিৎসকের একটি ‘পুল’ তৈরি করা হয়েছে। দফতরের অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, একটি পোর্টালের মাধ্যমে ভিডিয়ো-কলে রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হবে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে। আগামী দিনে তালিকাভুক্ত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হবে। নির্দেশিকার তালিকায় অবশ্য কলকাতার নাম রাখা হয়নি।
বাড়িতে করোনা চিকিৎসা প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ জানান, সারা দেশের মতো এ রাজ্যেও আক্রান্তদের মধ্যে উপসর্গহীন করোনা পজ়িটিভের সংখ্যা কম নয়। তাঁদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন মূলত আইসোলেশন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)