লকডাউন কত দিন চলবে, সে ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার।—ফাইল চিত্র।
আনলক পর্বে ক্রমেই বেড়ে চলেছে করোনা-সংক্রমণ। তাতে রাশ টানার চেষ্টায় কন্টেনমেন্ট এলাকার পরিধি বাড়িয়ে ফের কড়া নিয়ন্ত্রণবিধি ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। মঙ্গলবার সরকারি নির্দেশিকা দিয়ে নবান্ন জানিয়েছে, আগামিকাল, বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে এই নয়া নিয়ন্ত্রণবিধি কার্যকর হবে। তা কত দিন চলবে, সে ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত হবে।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, লকডাউন চলাকালীন করোনা সংক্রমণের হার মোটের উপরে নিয়ন্ত্রণে ছিল। তার জেরেই কমিয়ে আনা হয়েছিল কন্টেনমেন্ট এলাকার সংখ্যা। কিন্তু আনলক শুরু হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে গা-ছাড়া মনোভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছিল। দূরত্ববিধি না-মেনে ভিড় বাড়ছিল পথেঘাটে, বাজার-দোকানে। মাস্ক পরার ক্ষেত্রেও উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো। এই অবস্থায় আমজনতাকে সচেতন হওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনের ওই মহলের মতে, এক শ্রেণির মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই রাজ্যে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এই অবস্থায় নতুন করে কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
সম্প্রতি প্রতিটি জেলার করোনা পরিস্থিতি এবং তার মোকাবিলায় কী করা উচিত, তা নিয়ে জেলাশাসকদের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় নবান্ন। সেই সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। তার পরেই সিদ্ধান্ত হয় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের। জানা গিয়েছে, সব জেলাকে নির্দেশিকা পাঠানো হলেও দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং মালদহে এর প্রয়োগের উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এই সব জেলাতেই সংক্রমণের হার বেশি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কন্টেনমেন্ট জোনের তালিকা by Saubhik Debnath on Scribd
কেমন হবে নয়া নিয়ন্ত্রণ? সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, এখন কোনও বাড়ি, ফ্ল্যাট বা আবাসনে করোনা ধরা পড়লে শুধু তাকেই কন্টেনমেন্ট এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। তার লাগোয়া এলাকাকে বলা হচ্ছিল বাফার জ়োন। নতুন নির্দেশিকা মোতাবেক, বৃহস্পতিবার থেকে বাফার জ়োনও কন্টেনমেন্ট এলাকার অন্তর্ভুক্ত হবে। কোনও বাড়ি বা আবাসনে করোনা ধরা পড়লে তাকে ‘আইসোলেট’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে তার আশপাশের এলাকাজুড়ে কন্টেনমেন্ট বিধি কার্যকর করা হবে। কোথাও একাধিক সংক্রমণ হলে গোটা এলাকাকেই কন্টেনমেন্টের আওতায় আনা হতে পারে।
নয়া নিয়ন্ত্রণ
• কন্টেনমেন্ট এলাকার পরিধি বাড়ছে
• সেখানে আরও কড়া নিয়ন্ত্রণ
• কাল, বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে কার্যকর
কী আছে
• গোড়ায় ছিল এলাকাভিত্তিক কন্টেনমেন্ট জ়োন, তার লাগোয়া বাফার জ়োন
• এর পরে কন্টেনমেন্ট এলাকা হয় রাস্তাভিত্তিক, তার লাগোয়া বাফার জ়োন
• এখন কন্টেনমেন্ট এলাকা বাড়ি, ফ্ল্যাট বা আবাসনভিত্তিক, তার লাগোয়া বাফার জ়োন
কী হবে
• বাফার জ়োনকে কন্টেনমেন্ট এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হল
কন্টেনমেন্টে কড়াকড়ি
• সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ
• সব অফিস-কারখানা বন্ধ
• সমাবেশ নিষিদ্ধ
• বাজারহাট বন্ধ
• শুধু জরুরি পরিষেবা চলবে
ব্যবস্থাপনা
• জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরনো নিষেধ
• প্রশাসন জরুরি জিনিসপত্র বাড়ি পৌঁছে দেবে
• কত দিন লকডাউন চলবে, সে সিদ্ধান্ত পরে হবে
কোন কোন এলাকায় কন্টেনমেন্ট বিধি বলবৎ হবে তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কলকাতার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ ও কলকাতা পুরসভা। জেলার ক্ষেত্রে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারেরা। তবে কী কী নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হবে তা সরকারি নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কন্টেনমেন্ট এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে; সমস্ত রকম শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজকর্ম বন্ধ রাখতে হবে; কোনও যান চলাচল করবে না; কোনও সমাবেশ করা যাবে না; জরুরি নয় এমন সব কাজ বন্ধ থাকবে। কন্টেনমেন্ট এলাকার বাসিন্দাদের, সম্ভব হলে, অফিস যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার কন্টেনমেন্ট জোনের তালিকা by Saubhik Debnath on Scribd
এ দিন সরকারি নির্দেশিকা জারির পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় মাইকে প্রচার করতে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসন। ফলে খানিকটা উত্তেজনাও ছড়ায় আমজনতার মধ্যে। লকডাউনের গোড়ার দিনগুলির মতোই লাইন পড়ে যায় মুদিখানার দোকানের সামনে। কোন কোন এলাকায় কন্টেনমেন্ট বিধি চালু হবে তা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত না-হওয়ায় খানিকটা বিভ্রান্তিও ছড়ায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কন্টেনমেন্ট এলাকার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আজ, বুধবার সন্ধ্যায় ‘এগিয়ে বাংলা’ ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় কোন কোন এলাকা ফের লকডাউনের আওতায়, দেখে নিন
তবে কিছু জেলায় ইতিমধ্যেই লকডাউনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেমন, মালদহ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ— এই দুই শহরের পাশাপাশি কালিয়াচক, জালালপুর এবং সুজাপুর সদরে লকডাউন করা হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে সাত দিন ওই বিধি কার্যকর থাকবে। এই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা চার। ইংরেজবাজারে এখনও পর্যন্ত ১২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। দু’জন মারা গিয়েছেন। পুরাতন মালদহে আক্রান্ত ৫০ ছুঁইছুঁই।
আরও পড়ুন: ছোঁয়াচ-বিধি শিকেয় তুলে রাজনীতি, প্রশ্নে দায়িত্ববোধ
অন্য দিকে, উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় মঙ্গলবার থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সমস্ত বাজার-দোকান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন পুরসভার যুগ্ম প্রশাসক সুভাষ গোস্বামী। তবে যানচলাচল করবে। দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। সেখানেও নিয়ন্ত্রণবিধি চালু করার পরিকল্পনা চলছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
রাজ্য সরকারের এ দিনের নির্দেশিকা প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে লকডাউন তো দেখলাম না এত দিন। শুধু ঘোষণাই শুনে গেলাম। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আমার মনে হয়, এখন ১৫ দিন কড়া লকডাউন করলে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে যাবে।’’