ফাইল চিত্র।
করোনা রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে যে হাসপাতালে, তিনি সেখানে চাকরি করেন। তাই তাঁর উপস্থিতি নাকি গ্রামের পক্ষে ‘বিপজ্জনক’! ফরমান জারি হল, গ্রামে থাকা চলবে না!
নদিয়ার রানাঘাটের নতুনপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে ফিরে এমনই বিরোধিতার মুখে পড়তে হল করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে রাজ্যের লড়াইয়ের অন্যতম কেন্দ্র, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের কর্মী চিত্রা মণ্ডলকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চিত্রা গ্রাম থেকে চলে গেলেও তাঁরা সুরক্ষিত থাকবেন কি না, সেই নিয়ে শঙ্কিত তাঁর পরিবার। এমনকি, গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে স্থানীয়দের বোঝানো হলেও অনেকেই তা মানতে চাননি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ২৪ বছরের চিত্রা বেলেঘাটা আইডি-র অ্যাকাউন্টস বিভাগে কাজ করেন। সপ্তাহান্তে গ্রামে যান। লকডাউনের পর থেকেই তাঁর বাড়ি ফেরাকে কেন্দ্র করে বাসিন্দাদের বিরোধিতা শুরু হয়েছিল। শনিবার হাসপাতালের গাড়িতে গ্রামে ফেরার পর পরিস্থিতি জটিল হয়। গ্রামবাসীদের একাংশ তাঁর গ্রামে ঢোকা এবং থাকা নিয়ে বিরোধিতা শুরু করেন বলে অভিযোগ। চিত্রার বাবা মারা গিয়েছেন দশ বছর আগে। বাড়িতে শুধু মা ও ১৫ বছরের বোন। চিত্রার উপরেই সংসারের ভার। কিন্তু এই বিরোধিতার মুখে পড়ে স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্কিত গোটা পরিবার।
পুরো ঘটনাটি রানাঘাট ১ নম্বর ব্লকের ন'পাড়া-মুসুন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানকে জানান চিত্রা। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে কাজ করি বলেই যদি এ ভাবে সামাজিক বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়, তা হলে আমরা কী করব বলুন? এমন তো নয়, আমরা কোনও নিয়ম না মেনে বাড়িতে আসছি! আমাদেরও তো পরিবার রয়েছে। সেটা কেন কেউ বুঝছেন না?’’ আপাতত গ্রামে চিত্রার পরিবার কার্যত একঘরে। তাঁদের বাজার করতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
একের পর এক এমন সামাজিক বয়কটের ঘটনায় গত মাসেই সরব হয়েছিলেন আইডি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। এমনিতে হাসপাতালের তরফে সংলগ্ন এলাকাতেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেই চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। এ দিন পুরো ঘটনার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন চিত্রা। কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে সেই হোটেলে এসে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রত্যেককে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর আগে নিয়ম মেনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হয়। এটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তার পরও যদি মানুষ সচেতন না হন, তা হলে আমরা কাজ করব কী ভাবে? এমন চললে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই বিপর্যস্ত হতে পারে!’’
নতুনপাড়া গ্রাম যে পঞ্চায়েতের অধীনে, সেই ন’পাড়া-মুসুন্দা অঞ্চলের উপপ্রধান নবীন মণ্ডল জানাচ্ছেন, ঘটনাটি শোনার পরই তিনি চিত্রাদের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। নবীনবাবুর কথায়, ‘‘আমি সবাইকেই বুঝিয়েছি যে, এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্মীরাই আমাদের ভরসা। তাঁদের এ ভাবে হেনস্থা করার অর্থ হয় না। অনেকে সেটা শুনেছেন। কয়েক জন মানতে চাননি। আমার বাড়িতে এসেও বারবার তাঁরা অভিযোগ জানাচ্ছেন!’’
এ দিন রাতে সিভিক পুলিশকর্মীর একটি দল সংশ্লিষ্ট কর্মীর বাড়িতে যায়। পরিবার সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে বলে আশ্বাস দেয় তারা। সিভিক পুলিশকর্মী অভিজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘সপ্তাহে একদিন বাড়িতে আসছেন তিনি। তাঁকে তো থাকতে দিতে হবে। আমরা এ-ও বলেছি, তিনি না-হয় বাড়ি থেকে বেরোবেন না যত দিন থাকবেন। কিন্তু তাতেও আপত্তি অনেকের। কিন্তু সেই আপত্তি মানা হবে না। উনি যাতে বাড়িতে নিরাপদে থাকতে পারেন, আমরা সবাই সেটা দেখব।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)