ছবি: পিটিআই।
আশি বছরের বৃদ্ধ চিকিৎসক করোনা সন্দেহভাজন হিসাবে নিজের নমুনা পরীক্ষা করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল-পরীক্ষাগারে ঘোরাই সার। কোথায় গেলে তাঁর নমুনা পরীক্ষা হবে সেই সদুত্তর পাননি আর জি কর হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান। এনআরএসের শিশুশল্য বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, কন্যার নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য একটি বেসরকারি পরীক্ষাগারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। কিন্তু সাত দিন পরে রিপোর্ট পাবেন শুনে উৎসাহ হারান এনআরএসের ওই প্রবীণ চিকিৎসক।
রাজ্যে করোনা পরীক্ষা নিয়ে এমন বিভ্রান্তি চরমে। যার প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, হাসপাতালে ভর্তি না-হয়ে সাধারণ মানুষ কীভাবে করোনা পরীক্ষা করাবেন তা নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করা প্রয়োজন।
আর জি করের চক্ষু বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান জানান, শুক্রবার সকালে তিনি নিউটাউনের একটি বেসরকারি ল্যাবে যান। সেখান থেকে তাঁকে এলগিন রোডের ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু এলগিন রোডের ল্যাবের কেউ ফোন না-ধরায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যান। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে তিনি জানতে পারেন, আইডি হাসপাতালে বহির্বিভাগের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ নেই। এর পর গাড়ি নিয়ে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান তিনি। বৃদ্ধের অভিযোগ, বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান, নমুনা পরীক্ষা করানোর এখন যা চাপ রয়েছে, তাতে তড়িঘড়ি পরীক্ষা করানোর সুযোগ নেই। কবে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হবে, তা জানানো সম্ভব নয়। নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে সকাল থেকে হয়রানির শিকার হওয়ার পরে বিকালে আর জি করে যান ওই চিকিৎসক। সেখানে তাঁর ছাত্রদের বিষয়টি জানালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে নমুনা সংগ্রহ করানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়।
শনিবার ওই প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান বলেন, ‘‘আর জি করে পরিচিতি ছিল বলে নমুনা পরীক্ষা করাতে পারলাম। কিন্তু সেই সুযোগ ক’জনেরই বা আছে!’’ এনআরএসের শিশুশল্য বিভাগের চিকিৎসক বলেন, ‘‘যে সকল বেসরকারি ল্যাব আছে সেখানে রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। সাত দিন পরে রিপোর্ট পেয়ে কী লাভ!’’
নিউটাউন সুরক্ষার কর্তা চিকিৎসক সোমনাথ চক্রবর্তী জানান, বহির্বিভাগের মাধ্যমে এখন দিনে তাঁদের দু’টি কেন্দ্রে ২৫টি করে মোট পঞ্চাশটির বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘কাজের যা চাপ তাতে এর চেয়ে বেশি নমুনা নেওয়া যাচ্ছে না।’’
পিয়ারলেসের সিইও সুদীপ্ত মিত্র জানান, আরটি-পিসিআরে দিনে আড়াইশো নমুনা পরীক্ষা করেও ভিড় সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। মেডিকা কর্তৃপক্ষ জানান, সময় নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। তবে কেউ চলে এলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। রিপোর্ট পেতে এক-দেড় দিন সময় লাগছে। আমরি কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ১৫০-২০০ নমুনা পরীক্ষার চাপ সামলাতে গিয়ে তৎক্ষণাৎ সময় দেওয়া যাচ্ছে না। রিপোর্ট পেতে তিন-চার দিন লাগছে।