Coronavirus

রাজ্যে সংক্রমণের হার বেড়ে ১৩.৩%, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৩০ হাজার

রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৬০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ২০:৫৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যে নতুন করে লকডাউনের নিয়মকানুন কঠোর ভাবে কার্যকর করা শুরু হয়েছে। কিন্তু তাতেও লাগাম পরানো যাচ্ছে না করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে। প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হারও ঊর্ধ্বমুখী। স্বাভাবিক ভাবেই উগ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারা। কলকাতার সংক্রমণ বৃদ্ধির হারেও চিন্তার ভাঁজ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের কপালে। কী ভাবে এই পরিস্থতির মোকাবিলা করা সম্ভব, তা নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া।

Advertisement

‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার কী? প্রতিদিন যে সংখ্যক মানুষের টেস্ট হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট কোভিড পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। রাজ্যে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান মেলার পর থেকে এই সংক্রমণের হারের দিকে নজর রাখলেও উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। গত ২৫ জুনের আগে পর্যন্তও এই হার ৫ শতাংশের এর নীচে ঘোরাফেরা করছিল। এই দু’সপ্তাহেই বাড়তে বাড়তে রবিবার সেই হার পৌঁছে গিয়েছে ১৩.৩ শতাংশে।

রবিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ (১৫৬০)। এই নিয়ে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৩০ হাজার ১৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। রবিবারের পরিংসখ্যান মিলিয়ে রাজ্যে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৯৩২। রাজ্যে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান মিলেছিল ১৮ মার্চ। তার পর থেকে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু গত কয়েক দিনের পরিংসখ্যান দেখলে দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে যথেষ্টই। বৃহস্পতিবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০৮৮, শুক্রবার ১১৯৮, শনিবার ১৩৪৪ এবং রবিবার ১৫৬০। অর্থাৎ প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যার পার্থক্যও খাকছে প্রায় ২০০ জন করে। তবে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে মৃত্যুর হার। গত শুক্র, শনি ও রবিবার তিন দিনে প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা ২৬। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ২৭। বুধবার ছিল ২৩। ফলে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা ২৫-এর আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে।

Advertisement

(চলন্ত গড় দেখতে গ্রাফিকের উপরে হোভার করুন। চলন্ত গড় কী, তা নীচে দেওয়া আছে।)

আরও পড়ুন: এ বার করোনা পজিটিভ ঐশ্বর্যা-আরাধ্যাও

রাজ্যের করোনা সংক্রমণের মানচিত্রে উদ্বেগ মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক। অর্থাৎ কলকাতা ও তার লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি‌— এই চার জেলা নিয়ে। এই জেলাগুলিতে মোট সংক্রমণের সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনই প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। রবিবার সন্ধ্যার বুলেটিন অনুযায়ী কলকাতায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫৪। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৪১২। উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৫৭, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৬১, হাওড়ায় ১২৭ এবং হুগলিতে ৫৪ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যাতেও উদ্বেগ কলকাতাতেই সবচেয়ে বেশি। রাজ্যে মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি মৃত (৪৯৯) কলকাতায়। গত ২৪ ঘণ্টাতেও রাজ্যে ২৬ জন মৃতের মধ্যে ১৩ জনই কলকাতার।

তবে কলকাতা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের সংক্রমণ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। জলপাইগুড়িতে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ জন। উত্তর দিনাজপুরে ৫৪, মালদহে ৫৯ এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ৫২ জন নতুন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।

আরও পড়ুন: সংক্রমিত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ, দেশে ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ২৮৬৩৭

স্বস্তির জায়গা একটাই, সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও বাড়ছে রাজ্যে। রবিবার সন্ধ্যার বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৮ হাজার ৫৮১ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০,৫০০। সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৬১.৯০ শতাংশ। কিন্তু প্রতিদিন নতুন আক্রান্ত এবং প্রতিদিন সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যার মধ্যে ফারাক এখনও বিস্তর। এই পার্থক্যের জেরেই সক্রিয় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সেটাও উদ্বেগ বাড়ানোর মতো বলেই মনে করছেন চিকিৎসক-গবেষকরা।

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হলসেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দুদিনের সংখ্যা এবং তার পরের দুদিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবেলেখচিত্র ২ অর্থাত্ দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দুদিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement