গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রবিবারের তুলনায় সোমবার রাজ্যে একদিনে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমল। রবিবার যেখানে ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫৬০, সোমবার সেই সংখ্যা ১৪৩৫। রবিবার মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জনের। সোমবার মৃতের সংখ্যা ২৪। তবে রবিবারের তুলনায় সোমবার টেস্টও কম হয়েছে। কিন্তু টেস্টের তুলনায় ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার যে ভাবে বাড়ছে, তাতে উদ্বেগ কমছে না রাজ্য স্বাস্থ্য প্রশাসনের। পাশাপাশি কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলি নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
প্রতিদিন যে সংখ্যক মানুষের টেস্ট হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট কোভিড পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে প্রতিদিনের ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। রাজ্যে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান মিলেছিল ১৮ মার্চ। তার পর থেকে এই সংক্রমণের হারের দিকে নজর রাখলেও উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। গত ২৫ জুনের আগে পর্যন্তও এই হার ৫ শতাংশের এর নীচে ঘোরাফেরা করছিল। এই দু’সপ্তাহেই বাড়তে বাড়তে রবিবার সেই সংক্রমণের হার পৌঁছেছিল ১৩.৩ শতাংশে। সোমবার সেই সংখ্যা আরও বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৩.৯ শতাংশ। সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া বুলেটিন অনুযায়ী টেস্ট হয়েছে ১০ হাজার ৩৫৯ জনের। রবিবার টেস্ট হয়েছিল ১১ হাজার ৭০৯ জনের।
সোমবার সন্ধ্যার বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১৪৩৫ জন মিলিয়ে রাজ্যে এখন মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ৪৪৮। সোমবারের পরিংসখ্যান মিলিয়ে রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা ৯৫৬। গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যে নতুন করে লকডাউনের নিয়মকানুন কড়াকড়ি করা হয়েছে। তার ফলে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে বলে অনেকে মনে করলেও এখনই সেটা বলার সময় হয়নি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
(চলন্ত গড় দেখতে গ্রাফিকের উপরে হোভার করুন। চলন্ত গড় কী, তা নীচে দেওয়া আছে।)
আরও পড়ুন: হুগলিতে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের
রাজ্যের মধ্যে কলকাতা ও তার লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি— এই চার জেলা নিয়েই করোনা সংক্রমণে উদ্বেগ বেশি রাজ্য প্রশাসনের। সোমবার সন্ধ্যার বুলেটিন অনুযায়ী কলকাতায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৪১৮।রবিবার এই সংখ্যা ছিল ৪৫৪। উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৬৩, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৯৫, হাওড়ায় ১৬৮ এবং হুগলিতে ৫৪ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জন মৃতের মধ্যে ১০ জন কলকাতার।
তবে কলকাতা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের সংক্রমণ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দার্জিলিঙে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩ জন, মালদহে ৫৬, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৩৭ এবং উত্তর দিনাজপুরে ১৪ জন নতুন সংক্রমিত হয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানে (৪৯) জন।
আরও পড়ুন: মৃত্যু ছাড়াল ২৩ হাজার, দেশে মোট আক্রান্ত আট লক্ষ ৭৮ হাজার
স্বস্তির জায়গা একটাই, সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও বাড়ছে রাজ্যে। সোমবার সন্ধ্যার বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯ হাজার ২১৩ জন। তার মধ্যে সোমবার সুস্থ হয়েছেন ৬৩২ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ২৭৯। সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৬১.০৯ শতাংশ। প্রতিদিন নতুন আক্রান্ত এবং প্রতিদিন সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যার মধ্যে এই পার্থক্যের জেরেই সক্রিয় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— লেখচিত্র ২ অর্থাত্ দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)