ফাইল চিত্র।
করোনাকালে স্কুলে বসে পঠনপাঠন বন্ধ। ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসা বারণ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি-সহ নানা কাজে স্কুলে ভিড় করছে পড়ুয়ারাই। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, গ্রামের বহু স্কুলে পড়ুয়ারা না-এলে ভর্তিই হতে পারবে না। তাই বাধ্য হয়ে তাদের স্কুলে আসার অনুমতি দিতে হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, পড়ুয়ারা যদি আসে, তা হলে করোনা বিধি মেনে, স্কুল যথাযথ ভাবে জীবাণুমুক্ত করে ক্লাস চালু করা যাবে না কেন? স্কুল খোলার দাবিতে ইতিমধ্যেই রাস্তায় নেমেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। এমনকি শিক্ষকদের একাংশও একই দাবি জানাচ্ছেন।
ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসা যে পুরোপুরি আটকানো যাচ্ছে না, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষকেরা। কোচবিহারের মণীন্দ্রনাথ হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বীরেশ রায় জানান, একাদশে ভর্তি, মার্কশিট সংশোধন, কন্যাশ্রী— সব কাজেই পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে বাধ্য হচ্ছে। “অনেক অভিভাবক নিরক্ষর। কেউ পড়াশোনা জানলেও ফর্ম পূরণ বা অন্যান্য কাজ করতে পারেন না। তাই পড়ুয়ারা ওই সব কাজের জন্য পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে চাইলে আমরা বারণ করতে পারছি না,” বললেন বীরেশবাবু।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের ঝাঁপবেড়িয়া স্কুলের এক শিক্ষক জানান, কন্যাশ্রী-সহ বেশ কিছু সরকারি প্রকল্পে পড়ুয়ারা নানা ধরনের সাহায্য পায়। সেই সব প্রকল্পের ফর্ম পূরণের জন্য স্কুলে আসতে হয় পড়ুয়াদেরই। তাই ওদের স্কুলে আসার অনুমতি দিতে হচ্ছে।
নদিয়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ মণ্ডল বলেন, “ভর্তির সময় পড়ুয়াদের স্কুলে আসতে বারণ করেছে সরকার। কিন্তু বাস্তবটা অন্য রকম। অনেক ছাত্রছাত্রীর বাবা পরিযায়ী শ্রমিক, কেরল বা অন্যত্র চলে গিয়েছেন। মা পরিচারিকার কাজ করেন। এই অবস্থায় ভর্তি-সহ নানা কাজে পড়ুয়ারা স্কুলে না-এলে তাদের তো পড়াশোনাই ছেড়ে দিতে হবে।”
তবে অনেক বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, কাজের জন্য সব পড়ুয়াকে প্রতিদিনই স্কুলে আসতে হচ্ছে না। স্কুল চালু হলে রোজ আসতে হবে। বেশির ভাগ স্কুলেই স্যানিটাইজ়েশন বা থার্মাল পরীক্ষার যথাযথ পরিকাঠামো নেই। এখনও টিকা হয়নি বহু ছাত্রছাত্রীর। যেখানে এত সাবধানবাণীর পরেও বয়স্কেরা মাস্ক না-পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেখানে স্কুলে গিয়ে পড়ুয়ারা কতটা নিয়ম মানবে, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। স্কুলে গিয়ে খাবার ভাগ করে খাওয়ারও প্রবণতা রয়েছে অনেকের। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে কমবয়সিদের বেশি সংখ্যায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সর্বোপরি ছাত্রছাত্রীরা সংক্রমিত হতে শুরু করলে তাদের চিকিৎসার ঠিক পরিকাঠামো রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে স্কুল চালু করার ঝুঁকি নেওয়া হবে, উঠছে প্রশ্ন।