প্রতীকী ছবি।
মৃত্যুর হারে বেশি। কিন্তু রাজ্যে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার মাপকাঠিতে করোনা পজ়িটিভ হওয়ার হার এবং হাসপাতালে ভর্তির নিরিখে পুরুষের তুলনায় মহিলার সংখ্যা কম।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বলছে, শনিবার পর্যন্ত বঙ্গে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬৩৯ জনের। পুরুষের মৃত্যুহার ৩.৬৫%, মহিলার ৩.৮২%। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিসংখ্যানের তাৎপর্য বুঝতে হলে নমুনা সংগ্রহ এবং আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ-মহিলার ভাগ জানা জরুরি।
শুক্রবার রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬,১৯০। ১১,৬২২ জন পুরুষ, মহিলা ৪৫৬৮। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, মহিলাদের মধ্যে নমুনা পরীক্ষা এবং কেস পজ়িটিভিটির হারের সঙ্গে মৃত্যুর হারের যোগ রয়েছে। সেই মাপকাঠিতে রাজ্যের ছবিটা কেমন?
আইসিএমআরের (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ) পোর্টালে তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে ১৫ মে থেকে ৩১ মে-র মধ্যে ৮৩,৬৫৬ জনের নমুনা নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৭০,৩৩৩ (৮৪.০৭%), মহিলা ১৩৩২৩ (১৫.৯২%)। ২৫ মে থেকে ৩১ মে-র মধ্যে ৪১,১৫৬ জনের নমুনা সংগৃহীত হয়। পুরুষ ৩৩,৪৮১ (৮১.৩৫%), মহিলা ৭৬৭৫ (১৮.৬৫%)। মহিলাদের নমুনা সংগ্রহ সম্প্রতি বেড়েছে। আইসিএমআরের পোর্টাল বলছে, ১৮-২৫ জুন ৯৫,৬৪৬ জনের নমুনা নেওয়া হয়। পুরুষ ৬২,৫৭২ (৬৫.৪২%), মহিলা ৩৩,০৭৪ (৩৪.৫৮%)।
আরও পড়ুন: এক দিনেই আক্রান্ত প্রায় ২০ হাজার
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, করোনা আক্রান্ত মহিলা রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় সম্প্রতি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পুরুষ-মহিলার শয্যা সংখ্যায় হেরফের ঘটানো হয়েছে। এক সময় রাজ্যের অন্যতম কোভিড হাসপাতালের আইবি-৩ (এসি ডর্মিটরি) ওয়ার্ডে ৫০টি শয্যার মধ্যে ২৯টি পুরুষ এবং ২১টি মহিলা শয্যা ছিল। আইবি-৬ (এসি আইসোলেশন) ওয়ার্ডে পুরুষদের জন্য শয্যা ছিল ১৪টি এবং মহিলাদের জন্য ১০টি। সম্প্রতি আইবি-৩ ওয়ার্ডের ৫০টি শয্যাই পুরুষদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। ২৪ শয্যার আইবি-৬-এ এখন করোনা আক্রান্ত মহিলারা চিকিৎসাধীন।
হাওড়ার ফুলেশ্বরে বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ৬৮৫ জন কোভিড রোগীর মধ্যে পুরুষ ৪৪১ জন, মহিলা ২৪৪ জন।
আরও পড়ুন: বিশ্বে মৃত ৫ লক্ষ, রোজ ‘রেকর্ড’ আমেরিকায়
জনস্বাস্থ্য নিয়ে কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মহিলা চিকিৎসকের বক্তব্য, শুধু বঙ্গে নয়, সারা দেশেই নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে মহিলার সংখ্যা কম। অনুমানের ভিত্তিতে তার কারণ বলা সম্ভব নয়। সিনি-র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শ্রীপর্ণা ঘোষ মুখোপাধ্যায় জানান, গ্রাম বা শহর, সর্বত্র পরিবারের মধ্যে মহিলাদের স্বাস্থ্যের প্রতি কম গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। টিকাকরণ ছেলেদের মধ্যে বেশি। আবার স্কুলছুটে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। তবে করোনার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য কি না, সমীক্ষা ছাড়া সেটা বলা সম্ভব নয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উৎস বসুর পর্যবেক্ষণ, ‘‘করোনা রোধে যে-দূরত্ববিধি মানতে বলা হচ্ছে, মহিলারা অনেক ভাল ভাবে তা পালন করছেন। পুরুষের তুলনায় মহিলারা ঘরের বাইরে কম যান, এটাও একটা বিষয়।’’
কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রফেসর-চিকিৎসক কুণাল মজুমদার জানান, মহিলাদের অসুস্থতা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে না-গেলে যে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় না, সেটা একটা দিক ঠিকই। কিন্তু নির্দেশিকা যা রয়েছে, তাতেই মহিলাদের খুব বেশি নমুনা পরীক্ষা করার সুযোগ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘আক্রান্তের সংস্পর্শ-যোগ, ভ্রমণের ইতিহাস বা পরিযায়ী শ্রমিকদের যদি পরীক্ষা করতে বলা হয়, তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই পুরুষের সংখ্যা বেশি হবে। সেই নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে মহিলারা কম আক্রান্ত হচ্ছেন, এই সিদ্ধান্তে আসা যায় না। কারণ, পুরুষ-মহিলার সমান নমুনা পরীক্ষাই করা হয়নি।’’