ছবি এএফপি।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত যুবক দিন দশেক ধরে জ্বরে ভুগছেন। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা করানোর নাম নেই! শেষে গত ২৯ অক্টোবর পাইকপাড়ার বাসিন্দা যুবক যখন পরীক্ষা করালেন, ততদিনে তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মাও সংক্রমিত।
চিৎপুরের বাসিন্দা আর এক বৃদ্ধের ষষ্ঠীর দিন প্রথম উপসর্গ দেখা দিলেও নমুনা পরীক্ষা করাননি। নবমীর দিন স্ত্রী ভাইরাসের ঘায়ে কাবু হওয়ার পরও নয়। এদিকে পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে দু’জনে ওষুধ খাওয়া শুরু করে দেন। দিন তিনেক আগে তাঁদের নমুনা পরীক্ষা করানো হলে স্বামী-স্ত্রী’র দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে।
স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসক-আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, হোম আইসোলেশনে থাকা এ ধরনের রোগীরাই মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের মতে, বাড়িতে থাকা রোগীরা সময়ে হাসপাতালে না পৌঁছনোয় অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। এই দেরির পিছনে নমুনা পরীক্ষার বিষয়টিও জড়িয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: আজ রাজ্যে অমিত শাহ, দরবারে কি উঠবে ৩৫৬
আরও পড়ুন: প্রেমিক মনে বসন্ত ডিসেম্বরেই
যার প্রেক্ষিতে ‘হোম আইসোলেশনে’র চিকিৎসা নির্দেশিকায় উপসর্গ ফুটে ওঠা মাত্র নমুনা পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। রাজ্যে কোভিড নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘‘একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, উপসর্গ দেখা দেওয়ার তিন-চার দিন পরে নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। এটা ঠিক হচ্ছে না। জ্বর, কাশি, গন্ধ না পাওয়া, ক্লান্তিভাবের মতো উপসর্গ যেদিন দেখা দেবে সে দিনই টেস্ট করানো উচিত। দ্রুত পরীক্ষা করালে চিকিৎসাও দ্রুত শুরু করা যাবে। তা না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার সময় পাওয়া যাচ্ছে না।’’
কো-মর্বিডিটি যুক্ত বয়স্ক রোগীদেরও বাড়িতে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। যার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য দফতরের হোম আইসোলেশনের নির্দেশিকায় ষাটোর্ধ্ব কোনও ব্যক্তির কোভিডের পাশাপাশি ফুসফুস, যকৃৎ, কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, ক্যানসার এবং হৃদ্রোগের মতো অন্য অসুখ থাকলে, তাঁদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এই ধরনের আক্রান্তদের সেফ হোম বা হাসপাতালের ভর্তি রেখে চিকিৎসা জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
এই নির্দেশিকা কেন তা যাদবপুরের বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত চুয়াত্তর বছরের বৃদ্ধার ঘটনাতেই স্পষ্ট। কোভিডের পাশাপাশি বৃদ্ধার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। বাড়িতে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত জরুরি বিষয়গুলি পর্যবেক্ষণ করছেন মেয়ে। কিন্তু তিনিও করোনায় আক্রান্ত হন। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, আচমকা বৃদ্ধার অবস্থার অবনতি হলে অসুস্থ শরীরে মেয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে পারবেন, এটা প্রত্যাশিত নয়। আবার ভিন্ন মতের চিকিৎসকদের বক্তব্য, বাড়িতেও বহু বয়স্ক মানুষ সুস্থ হচ্ছেন।
কোন ধরনের রোগীকে সেফ হোম বা হাসপাতালে ভর্তি করা আবশ্যক তা স্পষ্ট করে জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, ‘‘যে সকল রোগীর ঝুঁকিপূর্ণ কো-মর্বিডিটির পাশাপাশি ষাটের উপরে বয়স তাঁদের সেফ হোমে ভর্তি করা প্রয়োজন। আক্রান্তের বয়স পঞ্চাশ থেকে ষাটের মধ্যে হলে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বিচার করে চিকিৎসক যা পরামর্শ দেবেন তা মেনে চলা জরুরি। সে জন্য হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের বাধ্যতামূলক ভাবে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’