এই স্পর্শ এখন অধরা। হলদিয়ায় দৃষ্টিহীনদের বিদ্যালয়ে। ফাইল চিত্র
দেশ জুড়ে লকডাউনে হিমশিম আমজনতা। দূরত্ব বজায়, মাস্ক, জীবাণুনাশক ব্যবহারের বিধিভঙ্গ হচ্ছে পদে পদে। অথচ এ সব মেনে চলা বাস্তবিকই যাঁদের কাছে কঠিন, যাঁদের কাছে স্পর্শই জীবনের আলো, সেই দৃষ্টিহীনেরা কিন্তু নিয়ম পালনে উজ্জ্বল। হলদিয়ার চৈতন্যপুরে রয়েছে দৃষ্টিহীনদের আবাসিক বিদ্যালয়। স্পর্শ-নির্ভর ব্রেল পদ্ধতিতে পড়াশোনা এখন বন্ধ। তবে নিয়ম পালন আর শৃঙ্খলা রক্ষায় কোথাও কোনও খামতি নেই।
আবাসিক এই বিদ্যালয়ের দু’টি ক্যাম্পাসে ১৯০ জন ছাত্রছাত্রী থাকেন। সারা রাজ্য থেকেই দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা এখানে আসেন। রয়েছেন জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারের ছেলেমেয়েরাও। লকডাউন ঘোষণার পরে পুলিশের বিশেষ অনুমতি নিয়ে অনেক অভিভাবকই নিজেদের ছেলেমেয়েদের বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন। তবে রয়ে গিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একাংশ।
আবাসিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজার পূর্ণেন্দু রায় বললেন, ‘‘করোনার সংক্রমণ নিয়ে পড়ুয়াদের সতর্কতার প্রতিটি বিষয় জানানো হয়েছে। সচেতন থাকতে বলা হয়েছে সকলকে। তবে ওরা হস্টেল থেকে সে ভাবে বাইরে কোথাও যায় না। বিকেলে নিজেদের মধ্যে মাঠে ক্রিকেট খেলে। দূরত্ব বজায় রেখেই সেই খেলা চলছে।’’
প্রাত্যহিক জীবনে স্পর্শই অবলম্বন দৃষ্টিহীনেদের। শুধু ব্রেল পদ্ধতিতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়াশোনা নয়, চলাফেরার সময়েও সিঁড়ির রেলিং ধরে, দরজা বা দেওয়াল ধরে হাঁটতে হয়। এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত চক্ষু চিকিৎসক অসীম শীল জানালেন, করোনা সঙ্কটের মতো এমন অভিজ্ঞতা কারওই আগে ছিল না। ফলে সাধারণ মানুষই যেখানে নানা অসুবিধায় পড়ছেন, সেখানে দৃষ্টিহীনেদের সমস্যা অনেক বেশি। কারণ স্পর্শ-নির্ভর ক্ষুরধার অনুভূতিকে সম্বল করেই দৃষ্টিহীনেরা বুঝতে পারেন মানুষের উপস্থিতি। নির্দিষ্ট দূরত্ব বোঝা ওঁদের পক্ষে বেশ কঠিন। সে-ক্ষেত্রে পারস্পরিক দূরত্বের বিধি পালনও কঠিন। তবে চৈতন্যপুরের আবাসিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সেই কঠিন নিয়মও মানছেন। বার বার নানা জিনিস স্পর্শ করতে হয় বলে হাতও ধুচ্ছেন নির্দিষ্ট সময় অন্তর।
পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “এখানকার দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা সবাই করোনা সম্পর্কে অবহিত। মোবাইলে নিয়মিত খবর শুনছে। তাই এই লকডাউনে ওরাও সচেতন। এমনকি খাবার টেবিলেও দূরত্ব বজায় রেখেই বসছে।”
সব মিলিয়ে নিয়ম পালনে প্রায় নজির গড়া এই দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, বিকেলে অল্প সময় মাঠে খেলা, পায়চারি আর অবসরে মোবাইলে গান-খবর শোনার মাঝখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তাও রয়েছে। ফোন করে বাড়িতে কথা বলছেন নিয়মিত। আলোর পথের দিশারি এই পড়ুয়াদের বিশ্বাস, করোনা-যুদ্ধে মানুষ জিতবেই। তবে নিয়ম পালন করতে হবে অক্ষরে অক্ষরে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)