Coronavirus in West Bengal

মৃত্যুহারে রাশ দিতে একাধিক দল রাজ্যের

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের বক্ষঃরোগ চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী জানান, গত বার ৬০-৬৫ বছরের বেশি বয়সি রোগীরা ফুসফুসের খারাপ অবস্থা নিয়ে ভর্তি হচ্ছিলেন

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২১ ০৫:৪৩
Share:

ফাইল চিত্র।

মাত্র আড়াই মাস আগে এক রাতে চমকে উঠেছিলেন তামাম বঙ্গবাসী। স্বাস্থ্য দফতরের ১ মার্চের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, রাজ্যে করোনা-আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ‘শূন্য’। স্বস্তির শ্বাস ফেলে ছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেই স্বস্তি স্থায়ী হয়নি।

Advertisement

শূন্য থেকে একটু একটু করে বেড়ে এখন দৈনিক করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০-র কাছাকাছি। দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ওঠানামা করছে। মৃতের সংখ্যার রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মৃত্যুহারের যে খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে, তা নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ভারতের জনসংখ্যা এতই বেশি যে, তাতে এক শতাংশের মৃত্যুও ভয়ঙ্কর।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘মৃত্যুহার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, আক্রান্তের হার আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আক্রান্তের হার কমাতে না-পারলে প্রাণহানি কমানো যাবে না। মৃত্যুহারকে হয়তো এক শতাংশেই ঠেকিয়ে রাখা হল। কিন্তু একই সঙ্গে সংক্রমণের হার কমাতে না-পারলে ওই এক শতাংশ হারেই মৃতের সংখ্যা হবে অনেক বেশি।’’ তবে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মৃত্যু কমাতে এক গুচ্ছ ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা চলছে কি না, তা দেখার জন্য ‘প্রোটোকল মিনিটরিং টিম’ বা ‘পিএমটি’ গড়া হয়েছে। সরকারি চিকিৎসক এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য-চিকিৎসকর ওই দল বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কোভিড হাসপাতাল পরিদর্শন করছে। কোনও খামতি বা ব্যবস্থাপনাতে ফাঁক পেলে কী করণীয়, তারও পরামর্শ দিচ্ছে পিএমটি। যে-সব সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুহার বেশি, সেখানে মেডিসিন এবং বক্ষঃরোগের এক জন করে শিক্ষক-চিকিৎসকদের নেতৃত্বে দল যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসকদের সারা দিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি হাতে-কলমেও শেখানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, রাজ্যে যত প্রাণহানি ঘটছে, তার মধ্যে বড় সংখ্যায় রোগী মারা যাচ্ছেন রাতের দিকে। স্বাস্থ্য শিবিরের আধিকারিকদের অভ্যন্তরীণ আলোচনাতেও বিষয়টি বার বার উঠে এসেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারীদের একাংশের ক্লান্তি ও অবসন্নতাই কি রাতে মৃত্যুর নেপথ্য কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে?

Advertisement

স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রাতে রোগী অস্বস্তির জেরে অক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে দিচ্ছেন। নাকের নল খুলে যাচ্ছে। সারা রাত এমন ভাবে থাকায় রোগীর শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অক্সিজেন কম যাচ্ছে। ফলে সকালে সেই রোগী মারাত্মক সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছেন। কিছু ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ করেছে স্বাস্থ্য ভবন। কোনও হাসপাতালে রাতের চিকিৎসায় যাতে ন্যূনতম খামতি না-থাকে, তার জন্য নাইট-রাউন্ড বা নৈশ পর্যবেক্ষণে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। সেই রাউন্ডে সব রোগীর তথ্য নির্দিষ্ট ফর্মে পূরণ করে তা জানাতে বলা হয়েছে হাসপাতালের সুপারকে। দৈনিক যে-সব প্রাণহানি ঘটছে, সে-ক্ষেত্রে মৃত্যু কেন হচ্ছে, বড় কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে ‘ডেথ রিভিউ কমিটি’। কমবয়সি (৫০ বা তার নীচে) বা কোমর্বিডিটি নেই, এমন রোগীর মৃত্যু হলে তাঁর ফাইল আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের বক্ষঃরোগ চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী জানান, গত বার ৬০-৬৫ বছরের বেশি বয়সি রোগীরা ফুসফুসের খারাপ অবস্থা নিয়ে ভর্তি হচ্ছিলেন। এ বার ক্রিটিক্যাল কেয়ারে সঙ্কটজনক রোগীদের বড় অংশের বয়স ৬০ বা ৫০-এর নীচে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে। আজ কাশি তো পরের দিন শ্বাস নিতে কষ্ট, তার পরের দিন মারাত্মক সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে কম বয়সি কিছু রোগীর অবস্থা। এ বার অল্পবয়সিদের বেশি মাত্রায় সঙ্কটজনক হতে দেখা যাচ্ছে বলে জানান ফর্টিস হাসপাতালের বক্ষঃরোগ চিকিৎসক সুস্মিতা রায়চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘কোভিড নিউমোনিয়ায় অনেকেরই প্রথম দিকে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা হচ্ছে না। তাই বার বার অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা মাপা উচিত। ৯০-৯২ দেখেও অনেকে ভাবছেন, অল্প বয়স, সুস্থ হয়ে যাব। এটা ঠিক নয়। তাঁরা হাসপাতালে অক্সিজেনের মাত্রা ৮৫-৮৪ হয়ে যাওয়ার পরে। যখন চিকিৎসা শুরু করলে ভাল ফল মিলতে পারে, সেই সময়টা অযথা নষ্ট করে হাসপাতালে আসছেন তাঁরা।’’

সামান্যতম উপসর্গ দেখলে যত দ্রুত পরীক্ষা করিয়ে নিজেকে আইসোলেট করা যাবে এবং আতঙ্কিত না-হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যাবে, ততই সঙ্কটমুক্ত থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান আরজি কর হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের বিভাগীয় প্রধান সুগত দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘গত বারের থেকে দ্বিতীয় ঢেউয়ে রোগ অন্য রকম আচরণ করছে। মূলত ফুসফুসের সমস্যা বেশি হচ্ছে। তা ছাড়াও সমস্যা হচ্ছে অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের।’’ সব মিলিয়ে আবার সেই ‘শূন্য’-এ ফেরার অপেক্ষা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement