ফাইল চিত্র।
অতিমারিতে খরচ বেড়েছে বিস্তর। তুলনায় অর্থাগম সামান্যই। পাওয়া, না-পাওয়ার দাঁড়িপাল্লায় রাজ্যের অপ্রাপ্তির পাল্লাই কার্যত ভারী।
এমনিতেই রাজ্য সরকারের আয় কম, ব্যয় অনেক বেশি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সেই আর্থিক পরিস্থিতিকে আরও খানিকটা নাড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের অন্দরের বক্তব্য, কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্রের কাছ থেকে যতটা আর্থিক সহযোগিতা আশা করা হয়েছিল, তা এখনও মেলেনি। ফলে রাজ্যে মূল অগ্রাধিকার যে করোনার মোকাবিলা, তা করতে গিয়ে আর্থিক পরিকল্পনায় নিরন্তর পরিবর্তন ও পরিমার্জন করতে হচ্ছে। তবে কিছুটা হলেও ভরসা জোগাচ্ছে কোভিড অনুদান তহবিল।
সরকারি সূত্রের খবর, করোনা সামলাতে গত ছ’মাসে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে রাজ্যকে। হাসপাতালের পরিকাঠামো বৃদ্ধি, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নিয়ে পরিকাঠামো তৈরি, অক্সিজেন, টিকা, ওষুধের জোগান ইত্যাদি মিলিয়ে এ-পর্যন্ত প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা স্বাস্থ্য দফতরকে দিয়েছে অর্থ দফতর। নির্বাচনের আগে ‘ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট’ বাবদ যে-অর্থ (চলতি আর্থিক বছরের বাজেট বিবৃতিতে ১২,৫৬১ কোটি টাকার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল) স্বাস্থ্য দফতরকে দেওয়া হয়েছিল, সমগ্রিক স্বাস্থ্য খাতে তার ২৫% খরচের অনুমতি তাদের দিয়েছে সরকার। তার একটা বড় অংশ করোনা খাতে খরচ হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকে। এখনও চলতি ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল থেকে জুন) চূড়ান্ত হিসেব কষা না-হলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের অনুমান, গত ছ’মাসে স্বাস্থ্য দফতরকেও কোভিড-ব্যবস্থাপনায় কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। এর উপরে করোনা সামলাতে চুক্তিতে অন্তত ১৩ হাজার চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনিশিয়ান নিয়োগ করতে হয়েছে সরকারকে। তাঁদের পারিশ্রমিক বাবদ কয়েকশো কোটি টাকা ধরে রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে গত ছ’মাসে খরচের বহর অনায়াসে ২০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে অর্থ দফতরের কর্তাদের অনুমান।
এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “সরকারের অগ্রাধিকার কোভিড মোকাবিলা করা। সেই অনুযায়ী যাবতীয় পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। সরকারি ও সরকার অধিগৃহীত চিকিৎসা পরিকাঠামোয় করোনা রোগীর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করে সরকার। অক্সিজেনের চাহিদা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ায় সেই পরিকাঠামো তৈরিতে বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচের ছাড়পত্র ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। তার উপরে রয়েছে ওষুধ এবং টিকা কেনার চাপ। ফলে আগামী দিনে বিপুল খরচের ইঙ্গিত রয়েছে।”
রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কাছ থেকে যে-সহযোগিতা আসছে, তা নামমাত্র বলেই জানাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, ‘স্টেট ডিজ়াস্টার রিলিফ ফান্ড’ বা এসডিআরএফ খাতে কেন্দ্রের কাছ থেকে এ-পর্যন্ত প্রায় ৪০৪ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। তার ৫০% বা ২০০ কোটির কিছু বেশি টাকা কোভিড ব্যবস্থাপনায় খরচ করা সম্ভব। ‘ন্যাশনাল হেল্থ মিশন’ প্রকল্পে পাওয়া ৩০৫ কোটি টাকার কিছুটা করোনা খাতে খরচ করতে পারবে রাজ্য। শুধু করোনা খাতে কেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় আট কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে বলে জানাচ্ছে রাজ্য সরকার। এক কর্তা বলেন, “এ-সব ধরে নিলেও রাজ্যকে গত ছ’মাসে অন্তত ১৭০০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। আগামী দিনে আরও খরচ করতে হবে। করোনার তৃতীয় ঢেউ যদি আসে, খরচের বহর আরও বাড়বে সন্দেহ নেই। প্রতিষেধক খাতে এ বার বিপুল বরাদ্দের সম্ভাবনা আছে। সেই দিকটাও বিবেচনায় রাখা জরুরি। এর মধ্যে আরও একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা ঘনিয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রের সহযোগিতা আরও বেশি পাওয়া গেলে রাজ্যের পক্ষে সুবিধা হত।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্র কিছুই দেয়নি। আমপানের ক্ষতিপূরণও সে-ভাবে মেলেনি। ফলে রাজ্যের উপরে চাপ বেড়েছে।
এই অবস্থায় রাজ্যের কোভিড তহবিলে অনুদানের হার কিছুটা হলেও বেড়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই অনুদান খাতে গত এক মাস আগেও প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ছিল। সম্প্রতি তা বেড়ে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এ ভাবে সহযোগিতা এলে রাজ্য সরকারের পক্ষেও এই বিপুল খরচ মোকাবিলা করতে খানিকটা সুবিধা হবে বলে মনে করছে প্রশাসনের কর্তারা।