প্রতীকী ছবি।
মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব তো তালিকাতেই ছিল। এ বার ভোট মরসুমে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা এসে পৌঁছল পশ্চিমবঙ্গেও। দেশের যে ৪৬টি জেলার পরিস্থিতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রাজ্যের কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা। ভোট চলাকালীন রাজ্যে সংক্রমণের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে ধরে নিয়ে আগামী এক-দেড় মাসের জন্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ার প্রশ্নে পরিকাঠামোগত সমস্ত ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখার নির্দেশ দিল কেন্দ্র। আজ ১২টি রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে বৈঠকে পরিকাঠামোগত প্রস্তুতি ও সংক্রমণ রুখতে পাঁচ দফা নীতি মেনে চলার উপরে জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা।
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই করোনা সংক্রমণের সূচক ঊর্ধ্বমুখী। গত চব্বিশ ঘণ্টায় গোটা দেশে প্রায় ৬২ হাজার ব্যক্তি নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। যা কার্যত রেকর্ড। গত এক সপ্তাহে ১২টি রাজ্যের ৪৬টি জেলায় গোটা দেশের মোট সংক্রমণের ৭১% ও মৃত্যুর ৬৯% ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। একা মহারাষ্ট্রেই গোটা দেশের ৫৯.৮ শতাংশ সংক্রমণের তথ্য সামনে এসেছে।
মন্ত্রকের বক্তব্য, গোটা দেশে যে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে তা মূলত বারোটি রাজ্যেই দেখা গিয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হল মহারাষ্ট্রের। ৪৬টি জেলার মধ্যে শুধু মহারাষ্ট্রেরই ২৫টি জেলা রয়েছে। আগামিকাল থেকে মহারাষ্ট্রের সর্বত্র রাত্রিকালীন কার্ফু জারি করা হয়েছে।
পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা। আজ তাই পরিস্থিতি সামলাতে ১২টি রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ ও নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বি কে পল।
বৈঠকে স্বাস্থ্যকর্তারা বলেন, বারোটি রাজ্য যদি কোমর বেঁধে সংক্রমণ আটকাতে নামে তবেই করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা থেকে গোটা দেশকে বাঁচানো সম্ভব। তাই দ্রুত সংক্রমিত ব্যক্তিকে চিহ্নিতকরণ ও তাঁদের নিভৃতবাসে রাখার প্রশ্নে জোর দেওয়া হয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ এই রোগ সম্পর্কে অবগত হলেও, তাঁদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ ব্যক্তি মাস্ক পরে থাকেন। যা করোনা সংক্রমণ রোখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। সেই কারণে আজ রাজ্যগুলিকে যে পাঁচটি নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে তার মধ্যে কোভিড সতর্কতাবিধি মেনে চলার উপরে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, রাজ্যগুলি যদি কেবল কোভিড-বিধি মেনে চলে তাহলেই সেই রাজ্যে ৭০ শতাংশ সংক্রমণ এক ধাক্কায় কমে যাবে।
দ্বিতীয়ত, রাজ্যগুলিকে আরটিপিসিআর পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। এক জন সংক্রমিত ব্যক্তি পিছু অন্তত ত্রিশ জন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তৃতীয়ত, সংক্রমণ বেশি পাওয়া যাচ্ছে এমন এলাকায় কনটেনমেন্ট জ়োন বা মাইক্রো কনটেনমেন্ট জ়োন গড়ে সংক্রমণকে গন্ডিবদ্ধ এলাকায় আটকে দেওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থত, মাঝে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হওয়ায় কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলি ফের পুরনো চেহারায় ফিরে যায়। এখন করোনা ফের বাড়ায় সেই হাসপাতালগুলিকে ফের করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। জোর দেওয়া হয়েছে করোনা সংক্রমিতের মৃত্যু আটকানোর উপরে। পঞ্চমত, ৪৬টি জেলায় ৪৫ বছরের উপরে থাকা ব্যক্তিদের দ্রুত প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। যে সব জেলায় প্রতিষেধকের চাহিদা কম সেখানকার অব্যবহৃত প্রতিষেধক প্রয়োজনে যে জেলাগুলিতে সংক্রমণের হার বেশি সেখানে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
ঘরের মাটিতে অতিমারির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের মধ্যেই টিকা সরবরাহ নিয়ে উদার ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারত জানিয়েছে, শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত যত সংখ্যক দেশবাসীকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে তার থেকে বেশি সংখ্যক প্রতিষেধকের ডোজ় সারা বিশ্বে সরবরাহ করেছে তারা।