গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
প্রতিদিন নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে রাজ্যে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। তবে একই সঙ্গে বাড়ছে সুস্থতার হারও। আর এই সুস্থতার হারই করোনা-যুদ্ধে স্বস্তি দিচ্ছে রাজ্য সরকারকে। অন্য দিকে সংক্রমণের হারও কমে ১০-এর নীচে নেমে আসায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলেই মত বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের।
বুধবার রাজ্যে সুস্থতার হার ছিল ৭২.৯৬ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সেই হার বেড়ে হয়েছে ৭৩.২৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৪৯৭ জন। বুধবার এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭২৫। সব মিলিয়ে রাজ্যে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭৮ হাজার ৬১৭ জন।
একই সঙ্গে সংক্রমণের হারেও কিছুটা স্বস্তির আশা দেখা যাচ্ছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা। প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড-টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড-রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। বুধবারের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে এই সংক্রমণের হার ছিল ১০.৫৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সেই হার কমে হয়েছে ৯.৯৮ শতাংশ। গত ৯ জুলাই সংক্রমণের হার ছিল ১০.০৭ শতাংশ। তার পর এক মাসেরও বেশি সময়ে কখনও এত নীচে নামেনি সংক্রমণের হার।
আরও পড়ুন: জ্বরে ভুগছেন পরিযায়ী, পিপিই পরে বাইকে চাপিয়ে হাসপাতালে গেলেন তৃণমূল নেতা
পাশাপাশি বুধবার করোনা টেস্ট হয়েছিল ২৭ হাজার ৭১২ জনের। বৃহস্পতিবার টেস্টের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ৩২। অর্থাৎ টেস্টের সংখ্যা বেড়েছে ২ হাজার ৩০০-রও বেশি। কিন্তু বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে ৬১। এত বেশি সংখ্যক মানুষের টেস্ট হওয়ার পরেও সেই অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি না পাওয়াও স্বস্তির লক্ষণ।
তবে সুস্থতার হার বৃদ্ধি বা সংক্রমণের হার কমলেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বৃহস্পতিবারও কিছুটা বেড়েছে। এ দিন রাতের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৯৯৭ জন। বুধবার নতুন করে ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছিলেন ২ হাজার ৯৩৬ জন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ১ লক্ষ ৭ হাজার ৩২৩। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ২৬ হাজার ৪৪৭ জন।
তবে মৃতের সংখ্যা কিছুটা হলেও উদ্বেগে রাখছে রাজ্য প্রশাসনকে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বৃহস্পতিবারের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সেই সংখ্যা ছিল ৫৪। সব মিলিয়ে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৫৯। এর মধ্যে কলকাতায় মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল হাজার। এ পর্যন্ত মহানগরীতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনায় মৃত্যু হয়েছে ৫২৪ জনের, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মারা গিয়েছেন মোট ১২৪ জন, হাওড়ায় ২৭৩ জন।
আরও পড়ুন: লালবাজারে ফের করোনা-থাবা, আক্রান্ত পুলিশ কর্তা
গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। এ দিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬৬ জন। এই নিয়ে কলকাতায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩০ হাজার ৪৭০। উত্তর ২৪ পরগনায় মোট আক্রান্ত ২২ হাজার ৮৬১ জন, হাওড়ায় ১০ হাজার ৬০১ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭ হাজার ৮৭৯ জন এবং হুগলিতে ৫ হাজার ৪৩ জন।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)