গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৬৯০। শুক্রবার ১ হাজার ৮৯৪। সব ধাপ পেরিয়ে শনিবার রাজ্যে দৈনিক নতুন করে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ফের রেকর্ড ভাঙল। শনিবার স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ১৯৮ জন। সব মিলিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ২০৯। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২৭ জনের। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭৬-এ পৌঁছল। কলকাতায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও এ দিন সর্বোচ্চ। তার জেরে শহরে কন্টেনমেন্ট জোনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরেই কলকাতায় দৈনিক নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যাটা ধাপে ধাপে বাড়ছিল। মঙ্গলবার তা ছিল ৫২৪, বুধবার ৪২৫, বৃহস্পতিবার ৪৯৬ এবং শুক্রবার ছিল ৫৬৩ জন। শনিবার মহানগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ, ৬৪৮ জন। পরিস্থিতি আঁচ করেই কলকাতায় কন্টেনমেন্ট জোনের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়েছে। এত দিন পর্যন্ত তা ছিল ২৪। এ দিন থেকে শহরের মোট ৩২টি এলাকাকে কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিন মৃত ২৭ জনের মধ্যে ১২ জনই কলকাতার বাসিন্দা।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
রাজ্যের একাধিক জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়েও আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। কলকাতা ছাড়াও দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুরের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ঘনিয়ে উঠছে। দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে এ দিন কলকাতার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। এ দিন সেখানে ৫৫৪ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হুগলিতে গত থেকে এ দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০৭। এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৪২, হাওড়ায় ১৬০, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৫৫ এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ৩২ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। উদ্বেগের ছবি ধরা পড়েছে উত্তরবঙ্গেও। গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ দিনাজপুরে ৯৪, মালদহে ৮৫, দার্জিলিঙে ৭০ এবং জলপাইগুড়িতে ৬৪ জন নতুন করে করোনার কবলে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: রাজস্থানে ক্ষমতা বজায় রাখার সংখ্যা রয়েছে, দাবি গহলৌতের মন্ত্রীর
গত কাল রাজ্যে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ১৪.৩ শতাংশ। এ দিন তা আরও কয়েক ধাপ বেড়েছে। প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের টেস্ট হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট কোভিড পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে প্রতি দিনের সংক্রমণের হার। রাজ্যে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান মিলেছিল ১৮ মার্চ। তার পর থেকে এই সংক্রমণের হারের দিকে নজর রাখলে উদ্বেগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া বুলেটিন অনুযায়ী, মোট ১৩ হাজার ৪৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা ধরা পড়েছে ২ হাজার ১৯৮ জনের। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার বেড়ে হল ১৬.৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ বাড়ল প্রায় ৩৫ হাজার, মৃত্যু বেড়ে ২৬২৭৩
রাজ্যের মোট ৪০ হাজার ২০৯ জন রোগীর মধ্যে ২৩ হাজার ৫৩৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১ হাজার ২৮৬ জন। রাজ্যে সুস্থতার হার গত কালকের থেকে সামান্য কমে এ দিন হয়েছে ৫৮.৫৪ শতাংশ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— লেখচিত্র ২ অর্থাত্ পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)