গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
জেলা প্রশাসন এবং পুলিশকর্তাদের উপরেই আপাতত লকডাউন-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দিল রাজ্য সরকার। রবিবার এই মর্মে সব জেলাশাসক, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। এ দিনই রাজ্যে ফের রেকর্ড গড়েছে করোনায় মৃত্যু এবং সংক্রমণ।
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ২২৭৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় এত সংখ্যক সংক্রমিত এবং এত সংখ্যক মৃত্যু, কোনওটিই হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, মৃতের তালিকায় দু’জন চিকিৎসক রয়েছেন। আর জি করের রেডিয়োথেরাপি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অভিজিৎ বসু (৭০) এবং এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অম্বর বল্লভ (৭১) মারা গিয়েছেন। সংক্রমিত হয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের এক আমলা।
প্রশাসনিক নির্দেশে বলা হয়েছে, স্থানীয় এলাকার পরিস্থিতি এবং প্রয়োজন বুঝে কন্টেনমেন্ট জ়োন বা শহরভিত্তিক লকডাউন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন জেলাশাসকেরাই। পরবর্তী পাঁচ-সাত দিনের জন্য এই ব্যবস্থা চলতে পারে। সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে কন্টেনমেন্ট জ়োন-ভিত্তিক লকডাউন চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। আনলক পর্বের শুরুতেই গোটা রাজ্যে ৩১ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য। পাশাপাশি, গত ১৫ জুলাই থেকে বিভিন্ন জেলায় চালু হওয়া শহরভিত্তিক লকডাউন ব্যবস্থা কত দিন চলবে, সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
বঙ্গে আক্রান্ত ৪২,৪৮৭
অ্যাক্টিভ রোগী ১৬,৪৯২
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২২৭৮
২৪ ঘণ্টায় মৃত ৩৬
মোট মৃত ১১১২
কো-মর্বিডিটির কারণে মৃত ৯২৪
(সূত্র: রাজ্য সরকার)
স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল বুলেটিন অনুযায়ী, গত ৯ জুলাই কলকাতায় মোট অ্যাক্টিভ কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৯১০। উত্তর ২৪ পরগনায় ১৮৪৫, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭৭৭ এবং হাওড়াতে তা ছিল ৯৮৬। ১৯ জুলাই, রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী কলকাতায় অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫২৭৫, উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৮৯০, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৩৬৫ এবং হাওড়ায় ১৫৯২।
পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় গত সাত দিনে সবথেকে বেশি সংক্রমিত হয়েছেন দমদম এবং নিমতা থানা এলাকায়। তাই নিমতার উত্তর দমদম পুরসভা শনিবার থেকে পূর্ণ লকডাউন শুরু করেছে। দমদম এবং দক্ষিণ দমদম এলাকায়, আজ সোমবার থেকে বেলা ১১টার পর থেকে লকডাউন শুরু হবে। দোকান-বাজার, অটো, টোটো, রিক্সা বন্ধ থাকবে। গারুলিয়া এবং উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার বেশ কিছু এলাকায় বেলা ১১টা পর থেকে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে নৈহাটি পুরসভা এলাকায় সাত দিনের জন্য লকডাউন চলবে। হুগলিতে কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকছে। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, কাঁথি, পাঁশকুড়া ও এগরা পুর-শহরের সর্বত্র এবং হলদিয়া শহরের একাংশে সার্বিক লকডাউন হবে।
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্তের অধিকাংশ কাজে বেরোনো মানুষ
তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী, নন্দকুমার, পাঁশকুড়া গ্রামীণ, সুতাহাটা ও হলদিয়া ব্লকের একাংশেও লকডাউন জারি করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও ক্ষীরপাই শহর, দাসপুর-১ ব্লকের সম্পূর্ণ এলাকা, দাসপুর-২ ব্লকের একাংশ এবং বাঁকুড়ার বিষ্ণপুর শহরে লকডাউনের প্রস্তাব প্রশাসনের কাছে জমা পড়েছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
পুরুলিয়া শহরে রবিবার নতুন করে দু’জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে শহরে কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন।
শনিবার থেকে পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের ৮৮ ও ৮৯ ওয়ার্ডে লকডাউন কার্যকর হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ তা চলবে। পূর্ব বর্ধমানের কালনায় শনিবার ও কাটোয়ায় রবিবার থেকে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। বর্ধমান শহরে ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে লকডাউন হবে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আংশিক লকডাউন করা হয়েছে।
নতুন করে লকডাউন চালু হচ্ছে উত্তর দিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়ায়। জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার শহরেও মেয়াদ বাড়ছে লকডাউনের। পূর্ণ লকডাউনের দাবি উঠেছে বালুরঘাটেও। তবে আপাতত মুর্শিদাবাদের কোথাও ঘোষিত লকডাউন নেই।
আরও পড়ুন: এ বার ভাড়াবাড়িতে ঢুকতে বাধা করোনা-যোদ্ধা বিডিওকে
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— লেখচিত্র ২ অর্থাত্ পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)