Coronavirus in West Bengal

রাজ্যে এক দিনে সর্বাধিক করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু

আক্রান্তের মাপকাঠিতে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় উদ্বেগের ছবি বহাল রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০২:৪৫
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

রাজ্যে করোনা পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যুর পরিসংখ্যানে বুধবার নতুন রেকর্ড তৈরি হল বঙ্গে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ রাজ্যে করোনা পজ়িটিভ ৩৯ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা হল ২২৯২, সেটিও সর্বাধিক।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরবর্তী চোদ্দো দিন এ রাজ্যে প্রতিদিন গড়ে ২৫ জন কোভিড পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত ১৯ জুলাই চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত্যুর পরিসংখ্যানে আচমকা বৃদ্ধি ঘটে। সাতাশ থেকে এক লাফে তা ছত্রিশ হয়ে যায়। পরবর্তী দু’দিনই সেই সংখ্যা ছিল ৩৫। এ দিন তা বেড়ে হয়েছে ৩৯! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, রাজ্যের মোট আক্রান্তের ৮৭ শতাংশই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। পাঁচ শতাংশ গুরুতর অসুস্থ (সিভিয়র) এবং আট শতাংশ আক্রান্ত হলেন মাঝারি মাপের অসুস্থ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, অ্যাক্টিভ রোগীর মাপকাঠিতে প্রতিদিনের মৃত্যুর হার ০.২০ শতাংশের আশপাশে এখন ঘোরাফেরা করছে। সোমবার রাজ্যের অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭,২০৪ জন। সে দিন চব্বিশ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৩৫। অ্যাক্টিভ রোগীর মাপকাঠিতে সোমবার এক দিনে করোনা পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যুর হার ছিল ০.২০ শতাংশ। মঙ্গলবার তা হয়েছিল ০.১৯ শতাংশ। এ দিন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.২১ শতাংশ।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

Advertisement

আক্রান্তের মাপকাঠিতে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় উদ্বেগের ছবি বহাল রয়েছে। এ দিন প্রায় সাতশোর ঘরে ঢুকে পড়েছে কলকাতার এক দিনে আক্রান্তের পরিসংখ্যান (৬৯২)। কলকাতার থেকে দূরত্ব কমিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার সেই সংখ্যা ৬২৪! সংক্রমণের ধারা অব্যাহত রয়েছে হাওড়া (২২৫), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১৯১) এবং হুগলি (১৩৯) জেলাতেও।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মৃত্যু এবং আক্রান্তের এই বাড়বাড়ন্তের জন্য সংক্রমিত এলাকাগুলিতে স্থানীয় মানুষজনের একাংশের আচরণও দায়ী। কোভিড রোগীদের প্রতি বিরূপ আচরণ দেখে মানুষজনের মধ্যে রোগ লুকনোর প্রবণতা বাড়ছে। যার জেরে একেবারে নিরুপায় না হলে হাসপাতালে যেতে চাইছেন না অনেকে। তাতে বিপদ বাড়ছে। আবার করোনা হলে কীভাবে চিকিৎসা পাবেন, সেই প্রক্রিয়াটি এখনও মসৃণ না-হওয়ার জন্যও সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে শয্যা পেতেও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীনও হচ্ছেন রোগীর পরিজনেরা।

এই পরিস্থিতিতে এ দিন কোভিড রোগীদের প্রতি অমানবিক আচরণ না করার জন্য অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ঝড়-কোভিড-ডেঙ্গু আসবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, ভালবেসে প্রতিরোধ করতে হবে। লড়াই রোগের বিরুদ্ধে। আক্রান্তকে পাড়ায় ঢুকতে না দেওয়া উচিত নয়।” লকডাউনে পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কাজ করতে গিয়ে ৩০ জন ডব্লিউবিসিএস অফিসার আক্রান্ত হয়েছেন। ৪০০-৫০০ পুলিশ আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ডাক্তার-নার্সরাও।’’ তাঁর পরামর্শ, “কেউ কোভিডে আক্রান্ত হলে ভয় পাবেন না। অল্প উপসর্গ থাকলে বাড়িতে থাকলেই ভাল।”

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement