ফাইল চিত্র।
মালদহ, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় কোনও কোনও তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত বা রূপান্তরকামী বা এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর যৌন সংখ্যালঘুরা করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ় পেয়েছেন। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে যাঁরা টিকা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যৌন সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি হাতে গোনা। এই পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার যৌন সংখ্যালঘু বা ‘আদার’ শ্রেণিভুক্তদের জন্য একটি টিকা কর্মসূচি দেখা গেল কলকাতায়।
যৌন সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং রূপান্তরকামীদেরও কোভিড অতিমারির ‘সুপারস্প্রেডার’ হিসেবে চিহ্নিত করে টিকার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই যৌনকর্মীদের মতো রূপান্তরকামী, এলজিবিটিকিউদেরও ভ্যাকসিন দেওয়ার গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে সমাজের এই অংশটি এখনও পর্যন্ত কার্যত অবহেলিতই। একটি বেসরকারি হাসপাতালের সহায়তায় প্রান্তিক যুবসমাজের একটি মঞ্চের তরফে এ দিন তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত তথা যৌন সংখ্যালঘু সমাজের ৫০ জনকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে।
আয়োজকদের তরফে জানানো হয়, ধাপে ধাপে অন্তত ২৫০ জন এলজিবিটিকিউ কিংবা রূপান্তরকামী নারী-পুরুষের টিকার বন্দোবস্ত করার পরিকল্পনা আছে। সামগ্রিক ভাবে খাতায়-কলমে রূপান্তরকামী বা এলজিবিটিকিউ গণনার কাজ থমকে আছে রাজ্যে। তা ছাড়া, সামাজিক নানা চাপে তাঁদের অনেকেই সামনে আসতে চান না। তাঁদের অধিকার নিয়ে কর্মরত সমাজকর্মীদের মতে, সাধারণ জনসংখ্যা বা ভোটার-তালিকার ১০ শতাংশ এই গোষ্ঠীভুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। সেই হিসেবে যৌন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ৬০-৬৫ লক্ষ মানুষের বাস এই বাংলায়। কোউইন অ্যাপে তাঁরাই ‘আদার’ শ্রেণিভুক্ত হয়ে টিকা নিচ্ছেন।
কিন্তু গোটা দেশেই এই সংখ্যাটা এখনও পর্যন্ত যৎসামান্য। একমাত্র কেরলে ‘আদার’ তালিকার ২০ শতাংশের বেশি মানুষ গত ১৫ মে-র মধ্যে প্রতিষেধক পেয়েছেন। অথচ এই শ্রেণির অনেকেই নানা ধরনের সামাজিক বৈষম্যের শিকার। তাঁদের অনেককেই পেশার খাতিরে রাস্তায় ঘুরে কাজ করতে হয়। নানা ছুতমার্গের জন্য তাঁদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের অধিকারও সব সময় খুব সুলভ নয়।
রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, রূপান্তরকামী কিংবা এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীভুক্তদের নিজেদেরও এ ব্যাপারে কিছুটা সক্রিয় হতে হবে। তাঁর কথায়, “আলাদা ভাবে রূপান্তরকামী বা তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের টিকাকরণের ব্যবস্থা না-ও হতে পারে। তবে সমাজকল্যাণ দফতরের মাধ্যমে চিহ্নিত করে তাঁদের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ চলছে।”