গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আক্রান্তের মোট সংখ্যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় সামান্য কম। কিন্তু শুক্রবার সংক্রমণের সংখ্যার মাপকাঠিতে কলকাতা (৬৯৯), উত্তর ২৪ পরগনা (৫৬৭), হাওড়া (১৮৯), হুগলি (৭৪) এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা(১৪৩)-সহ রাজ্যের করোনা মানচিত্রের উদ্বেগের জেলাগুলিতেও আক্রান্তের সংখ্যায় লক্ষ্যণীয় কোনও বৃদ্ধি ঘটেনি। কড়া লকডাউনের মধ্যে উঠে আসা পরিসংখ্যানে স্থিতাবস্থা বজায় রইল বঙ্গের চব্বিশ ঘণ্টার করোনা-তথ্যে।
এদিন স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় রাজ্যের ২৩টি জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২২১৬। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা ছিল ২৪৩৬। এদিনের বুলেটিনে একদিনে কোভিড পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫ বলে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। মৃত প্রৌঢ় চিকিৎকের কোভিডের পাশাপাশি অন্য অসুখও। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, সংশ্লিষ্ট কোভিড হাসপাতালে রোগী সংখ্যার চাপ কমাতে সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত বেশ কিছু হোটেল ভাড়া নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলি যেভাবে স্যাটেলাইলট কেয়ার সেন্টার গড়ে তুলেছে, হোটেলগুলিতে সেভাবে মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীদের রাখার কথা ভাবা হয়েছে। পাশাপাশি, যে সকল কোভিড রোগীকে শুধু পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য ছুটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাঁদেরও এ ধরনের হোটেলে পাঠানোর কথা প্রাথমিক ভাবে ভাবা হয়েছে। প্রায় ১৩০০ রোগীকে যাতে এই পদ্ধতিতে শয্যা দেওয়ার যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজি। এ দিকে সূত্রের খবর, এ দিন নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী সহ ১২ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। বৃহস্পতিবার সে সংখ্যা ছিল ৩৯, যার মধ্যে ২২ জন জুনিয়র চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
এদিকে বৃহস্পতিবারের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে এদিন ফের সরকারি কোভিড হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবায় গতি আনতে চিকিৎসক সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামে’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য ভবনের এক পদস্থ কর্তা। তৃতীয় পক্ষ ছাড়া স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা সরাসরি যোগাযোগ করলে সরকারি পরিকাঠামোর শরিক হয়ে কোভিডের সঙ্গে যুদ্ধে যে আপত্তি নেই, তা বৃহস্পতিবারই স্পষ্ট করে দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সংগঠন। এদিন স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তার ফোন পেয়ে কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি এবং ছুটির প্রক্রিয়ায় গতি আনার পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরা যুক্ত হতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা হয় বলে খবর।
আরও পড়ুন: নিয়ম ভাঙার পর লকডাউনে কি আজ নিয়ম মানার দিন?
চার মাসের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যুক্ত সকল স্তরকে কোভিড মোকাবিলায় যুক্ত করতে চাইছে স্বাস্থ্য ভবন। সেই ভাবনা থেকে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে সংক্রমিত এলাকায় নমুনা পরীক্ষার কথাও ভাবা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ সবসময় স্বাগত। সংক্রমিত এলাকায় মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষার পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, এখন অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি, ক্যাব বা গণ পরিবহণের মাধ্যমে টেস্টিং সেন্টারে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। তাতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও বাড়ছে। সংক্রমিত এলাকায় মোবাইল ভ্যান পৌঁছলে সেই সম্ভাবনা কমার একটা পরিসর তৈরি হবে। সর্বোপরি কম সময়ে অনেক বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। অগস্টের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রতিদিন ২৫ হাজার নমুনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে রাজ্য এগোচ্ছে বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই একদিনে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কুড়ি হাজারের গন্ডি স্পর্শ করতে পারে। প্রতিদিন ২-৩ হাজার র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন।
আরও পড়ুন: অটোয় সুরক্ষা কতটা, সন্দিহান যাত্রী ও চালকেরা
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)