Durga Puja 2020

উৎসবের কারণে পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে: কেন্দ্র

আবহাওয়া ভাল হতেই অষ্টমীর রাতে আড়মোড়া ভেঙে পুজোর ভিড়ের দেখা মিলেছে রাস্তাঘাটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৪৭
Share:

ফাইল চিত্র।

প্রশ্নটা ছিল, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরও সচেতনতার মাপকাঠিতে জনতা কি উত্তীর্ণ হতে পারবে! মণ্ডপ দর্শনে আদালতের রায় পুজো পরিক্রমায় বেড়ি পরালেও রেস্তরাঁ, শহরের ছোট-বড় খাবারের দোকানে জমে উঠেছে আড্ডা। ‘যাই, একটু ঘুরেই আসি’ বলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাড়ির বাইরে বেরনোর প্রশ্নে পঞ্চমী-ষষ্ঠী-সপ্তমী নাগরিকদের বড় অংশ সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু আদালত সক্রিয় না হলে নাগরিকদের ঘরে আটকে রাখা কতটা সম্ভব হত, সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে নবমীর ভিড়।

Advertisement

গত ১৯ অক্টোবর পুজো মণ্ডপগুলিতে দর্শক ঢোকা নিষিদ্ধ করে কলকাতা হাইকোর্ট। তারপর চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমীতে শহরের পথঘাটে চেনা উৎসব-উল্লাসের মুহূর্ত চোখে পড়েনি। নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টির পূর্বাভাসও ছিল। কিন্তু আবহাওয়া ভাল হতেই অষ্টমীর রাতে আড়মোড়া ভেঙে পুজোর ভিড়ের দেখা মিলেছে রাস্তাঘাটে। নবমীতে তা বেড়ে যায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম হলেও দৃশ্যমান ছিল সেই ভিড়। ছেদ পড়েনি রেস্তরাঁর আড্ডায়। সেই সব পুজো-মুহূর্তের হাত ধরে আক্রান্তের সংখ্যায় কতটা বদল ঘটবে, তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা রয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি, চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘পুজোর সময় শহরের রাস্তাঘাটের ছবি দেখে ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুবই সন্তুষ্ট। ভিতর থেকে সচেতনতা না এলে এটা সম্ভব হয় না। তবে মণ্ডপে ভিড় না হলেও মেলামেশা হয়েছে, এটাও ঠিক। সেটাই যা উদ্বেগের।’’

এরই মধ্যে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়েছে, সার্বিক ভাবে দেশে সংক্রমণ কমলেও, উৎসবের কারণে কয়েকটি রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মুহূর্তে মোট সংক্রমিতের ৭৮ শতাংশ রোগী রয়েছেন ১০ রাজ্যে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। পঞ্চম স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। গত দু'সপ্তাহে মোট রোগীর প্রশ্নে দশম থেকে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। সংক্রমণের শুরু থেকে সার্বিক রোগী মৃত্যুর সংখ্যার বিচারে দেশের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬৫৪৬। অন্য দিকে, কেন্দ্রের দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী মৃত্যুর নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। শীর্ষে মহারাষ্ট্র। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা-আক্রান্তের নিরিখেও দ্বিতীয় স্থানে পশ্চিমবঙ্গ । তালিকার শীর্ষে কেরল।

Advertisement

আরও পড়ুন: এক জন ‘সুপার স্প্রেডারে’ আক্রান্ত কত, বাড়ছে শঙ্কা

যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এ দিনের বুলেটিনের পরিসংখ্যান স্বস্তিদায়ক। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারের নীচে কমে হয়েছে ৩৯৫৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। তবে শহরের বেসরকারি ল্যাবের কর্ণধারদের একাংশ জানিয়েছেন, পুজোর দিনগুলিতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও কমেছে। তা ছাড়া সার্বিক ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও কলকাতা (৮৮৪), উত্তর ২৪ পরগনা (৮৭৫) এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার (২৪৯) আক্রান্তের পরিসংখ্যানে তেমন হেরফের ঘটেনি।

কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার জানান, নবমীতে নাগরিকদের একাংশের ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে ঠিকই। তবে পুজোর ভিড়ের হাত ধরে সংক্রমণের যে মাত্রাবৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল তা হাইকোর্টের নির্দেশের জেরে অনেকটা কমবে বলে মনে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘শেষ পর্যন্ত জনতা কাপ নিয়ে গেল কি না, আরও দু’সপ্তাহ পরে বোঝা যাবে।’’ ‘প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়র্সে’র উপদেষ্টা চিকিৎসক সৌরভ দত্ত জানান, হাইকোর্টের রায়ের পরে মানুষ যে সংযম দেখিয়েছেন, তা বজায় থাকলে কোভিড নিয়ন্ত্রণের কাজ অনেক সহজ হবে।

আরও পড়ুন: অতিমারির পুজো এর থেকে বেশি আর কী-ই বা হতে পারত

জেলাস্তরে সাধারণ মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সে বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য-চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘পুজোয় মানুষ কম বেরিয়েছেন। তার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। কিন্তু মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনও অনীহা রয়েছে। শুধু কোভিড নয়, যক্ষ্মা, দূষণ জনিত অসুখের পাশাপাশি অন্য রোগের মোকাবিলাতেও মাস্কের জুড়ি মেলা ভার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement