নেই দূরত্ববিধির বালাই। ছবি এএফপি।
সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে শয্যা সঙ্কটের পূর্বাভাস ইতিমধ্যে দিয়ে রেখেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার তাতে চিকিৎসক ঘাটতির আশঙ্কা যোগ করলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সরকারি কোভিড হাসপাতালে সর্বক্ষণ করোনা রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের আর্জি জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীকে একটি চিঠি দিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজর অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় বঙ্গে ৩৩৭০ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৩ জনের। দুই মাপকাঠিতেই রাজ্যের পরিসংখ্যান হল সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, স্বাস্থ্য অধিকর্তার স্ত্রী আক্রান্ত হয়ে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি। স্বাস্থ্য অধিকর্তার আরটি-পিসিআরের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে খবর।
আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যানে জোড়া রেকর্ডের দিন রাজ্যের তেইশটি জেলায় সংক্রমণের ধারাবাহিকতা মোটের উপরে একই রয়েছে। কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৭৪২ এবং ৭১২ জন। এদিন কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। উত্তর ২৪ পরগনায় কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫। পুজোর আবহে গত কয়েক দিন ধরেই প্রতিদিন বঙ্গে সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে চলেছে। যার প্রেক্ষিতে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে ফের শয্যার জন্য চাপ বাড়ছে বলে খবর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পুজো যত এগিয়ে আসবে সঙ্কট তত বাড়বে।
আরও পড়ুন: কাজ নেই প্লাজ়মায়, বলল আইসিএমআর
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের চিঠিতে কার্যত সেই আশঙ্কারই প্রতিফলন ঘটেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি, শিক্ষক-চিকিৎসক মিলিয়ে একাধিক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মেডিক্যালের চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, অন্তত ৩০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কোভিড মোকাবিলায় রোগী পরিষেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ঘাটতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে চিঠিতে লিখেছেন অধ্যক্ষা। সমস্যার সমাধানে মেডিসিনে এমডি করেছেন এমন সিনিয়র রেসিডেন্টদের দেওয়ার জন্য আর্জি জানান অধ্যক্ষ। তাঁরা মেডিক্যালের প্রাক্তনী হলে সুবিধা হয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, চিঠি পাঠানো হলেও তার প্রাপ্তি সংবাদ এখনও মেলেনি।
আরও পড়ুন: দুর্গাপুজো ও অন্যান্য উৎসবের নিয়ে রাজ্যগুলিকে ফের সতর্ক করল কেন্দ্র
চিঠির প্রেক্ষিত প্রসঙ্গে মেডিক্যালের শিক্ষক-চিকিৎসদের একাংশ জানান, প্রতিদিন রোগী ভর্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের আর্জি জানানো হয়েছে। সরকারি কোভিড হাসপাতালে প্রশাসনিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘যে ভাবে রোগীর চাপ বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি কী হবে বলা যাচ্ছে না। তিন দিন আগেও যা ছিল তার থেকে ছবিটা খারাপ। আগামিদিনের পরিকল্পনার জন্য চিঠি লেখা হয়েছে।’’ কিন্তু সেই চিকিৎসকদের মধ্যে মেডিক্যালের প্রাক্তনীরাই কেন পছন্দের তালিকায়? মেডিক্যালের প্রবীণ চিকিৎসকদের একাংশ বলেন, ‘‘আমাদের ১২ জন চিকিৎসককে বন্ডে অন্যত্র পোস্টিং করা হয়েছে। তাঁরা ফিরে এলে কাজ করতে সুবিধা হয়। সেটাই বলা হয়েছে।’’ অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘এখন যে ভাবে চলছে তাতে পুজোর পরে সংক্রমণের ঢেউ আটকানো মুশকিল। পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে হাসপাতালে শয্যা পাওয়া দুষ্কর হবে। তার আভাস ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)