ছবি এএফপি।
কোভিড চিকিৎসার কাজে ‘উত্তীর্ণ’কে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে মঙ্গলবার এই খবর মিলেছে। একইসঙ্গে দু’টি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরি করে সেগুলি পরিচালনার ভার কোনও বেসরকারি হাসপাতালের হাসপাতালের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেফ হোম নাকি কোয়রান্টিন কেন্দ্র— কীভাবে উত্তীর্ণকে ব্যবহার করা হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। নবান্ন সূত্রে আরও খবর, দু’টি হাসপাতালের পরিকাঠামো গড়ে তা বেসরকারি হাসপাতালের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী। দরপত্র ডেকে নিয়ম মেনে দ্রুত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চান তিনি।
রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে সোমবার নবান্নে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোভিড এখন বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমরা এখন টেস্ট বেশি করছি। মনে রাখবেন, কোভিড কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত করতে পারে টেস্টিং, ট্র্যাকিং, ট্রেসিং।’’ এ কথা বলেই নমুনা পরীক্ষা বেশি হলে কেন সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে তা বুঝিয়ে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২২৬১ জন ও একদিনে মোট মৃতের সংখ্যা ৩৫ । সংক্রমণের ধারা অব্যাহত রয়েছে কলকাতা (৬৫১) এবং হাওড়ায় (২২০)। এ দিন হুগলিতে চব্বিশ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ ও উত্তর ২৪ পরগনায় ৪৫৬। দুশোর গণ্ডি এ দিনই স্পর্শ করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২০৭)।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সংক্রমিতদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলে শয্যা মিলবে কি না, তা নিয়ে গত কয়েক দিন বঙ্গের করোনা পরিমণ্ডল সরগরম রয়েছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ১৮ হাজার বেড অ্যাভেলেবল আছে। ১১ হাজার কোভিড হাসপাতাল আর ৭ হাজার সেফ হোম। ৩১ অগস্টের মধ্যে এটা ২৩ হাজার ৫০০ হয়ে যাবে।’’ পাশাপাশি, ১৫ অগস্টের মধ্যে রাজ্য প্রতিদিন ২৫ হাজার নমুনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেটি হলে নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে মাপকাঠি রয়েছে তা স্পর্শ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না কোভিড সেরে গেলেও
কোভিড পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যুর হার প্রসঙ্গে তিনি জানান, রাজ্যে এখন করোনায় মৃত্যুহার ২.৫৬ শতাংশ। মৃত্যুহার কমানোর ব্যাপারে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানান, কোভিডের বেশিরভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী অন্য অসুখ (কো-মর্বিডিটি)। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তার দেখাবেন। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করালে অনেক কিছুই ভাল হয়ে যায়। আমাদের এখানে উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগী ৮৭ শতাংশ। মাঝারি মাপের অসুস্থ ৮ শতাংশ। ৫ শতাংশ রোগী হলেন গুরুতর অসুস্থ। তাঁদেরও চিকিৎসক, নার্সরা সুস্থ করে বাড়ি পাঠানোর সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন।’’
এ দিন বুলেটিন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে সুস্থতার হার হল ৫৯.৬১ শতাংশ। সুস্থতার হার বা ডিসচার্জ রেটের সঙ্গে হাসপাতালে দ্রুত শয্যা খালি হওয়ার বিষয়টি জড়িত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এক জন রোগী যদি একমাস বেড আটকে রাখেন তা হলে অন্যজন বেড পান না। আমরা চেষ্টা করব, আক্রান্ত যে বেডে-ই থাকুন, তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়ে ভাল থাকুন।’’
আরও পড়ুন: পুরনো রূপেই ফিরল নতুন পর্বের লকডাউনের নিয়ন্ত্রণবিধি
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, কোভিড হাসপাতালগুলিতে কোন রোগী কতদিন আছেন, উপসর্গহীন, মৃদু বা মাঝারি মাপের উপসর্গযুক্ত এবং গুরুতর আক্রান্ত ক’জন আছেন সে বিষয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করার কাজে ছয় সদস্যের একটি ‘ডেটা অ্যানালিসিস সেল’ গড়া হয়েছে। অ্যাডমিশন সেলের মাধ্যমে হাসপাতাল, সেফ হোম এবং হোম আইসোলেশনে কতজন গেলেন, সেই তথ্যও সংগৃহীত করবে নবগঠিত সেল। প্রতিদিন বিকাল পাঁচটার মধ্যে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কাছে যাতে সেই তথ্য পৌঁছয়, সেলের নোডাল অফিসার অদিতি দাশগুপ্তকে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এই কাজে নিযুক্ত আধিকারিকদের ছুটি অনুমোদনের ক্ষেত্রেও শর্তাবলী আরোপ করা হয়েছে বলে খবর।
কোভিড শয্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, রাজ্যে ১৮ হাজার কোভিড বেড রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে সোমবার অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা বলা হয়েছে ১৭ হাজার (১৭,২০৪, এদিন তা বেড়ে হয়েছে ১৭৮১৩)। তাই যদি হয় তা-হলে রোগীকে বেডের জন্য দৌড়ে বেড়াতে হচ্ছে কেন? হয় তথ্য অসত্য, নয় মুখ্যমন্ত্রী অসত্য কথা বলছেন।’’