প্রতীকী ছবি।
আক্ষেপ ছিল, দ্বীপান্তরিত দিনযাপনে তাঁরা যেন পরবাসী। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সেই ‘পরবাস’ই তাঁদের কাছে সুসময় হয়ে ফিরে এসেছে!
পরাশপুর আর উদয়নগর খণ্ড, দুই চরের প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের আলাপই হয়নি কোভিডের সঙ্গে। পদ্মার কোলে জলঙ্গির ভূখন্ডে যখন করোনা-ত্রাসে দুয়ার এঁটেছে একের পর এক গ্রাম, তখন নদীর বুকে করোনাহীন ঠিকানা গড়েছেন ওই দুই চরের বাসিন্দারা।
জলঙ্গির পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের শুক্লা সরকার তাই বলছেন, ‘‘ভরা পদ্মা বড় বাঁচিয়েছে দিয়েছে ওঁদের। স্বাস্থ্য দফতরের দল চরে ক্যাম্প করেছিলেন, সামান্য উপসর্গ তো দূরের কথা, ওঁরা কেউ করোনার কথাই তেমন শোনেনি।’’ অগম্য চরের মানুষজনের দুর্বিসহ দিনযাপন নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সম্বৎসর মাথাব্যথা থাকে। কিন্তু কোভিড আবহে সেই দূরত্বই যেন তাঁদের বাচিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন শুক্লা।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
স্বাস্থ্যকর্তারাও দাবি করছেন, চর সত্যিই নিরাপদ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে যাঁরা প্রাকৃতিক ভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন, সংক্রমণ তাঁদের ছুঁতে পারার কথা নয়।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলছেন, ‘‘এমন প্রাকৃতিক লকডাউনের সুবিধা আর ক’জন পাবেন!’’ করোনা অতিমারির আবহে এই বিচ্ছিন্ন থাকাটাই খুব জরুরি বলে মনে করছেন জলঙ্গির বিএমওএইচ অমর ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই দুই চরে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন, করোনার ছায়া পড়েনি সেখানে। এই আবহে চর যেন আদর্শ ঠিকানা হয়ে উঠেছে!’’ পরাশপুর চরের পুরনো বাসিন্দা জাব্দুল মণ্ডল হাসছেন, ‘‘এই ক’মাস তো আমরা চরেই পড়ে আছি। কেউ আসে না, আমরাও আর নদী পারাপার করি না। রোগ আসবে কোন পথে!’’
উত্তাল পদ্মা আর তার শাখা-প্রশাখা দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে থাকা পরাশপুর আর উদয়নগর খণ্ড— দুই চর এ যাবত বিএসএফের চোখ রাঙানি দেখেছে বিস্তর। চর ছেড়ে নুন-হলুদ-কেরোসিনের খোঁজে মূল ভূখণ্ডে পাড়ি দিলেও হাজারো কৈফিয়ত দিতে হয় তাঁদের। চরের মুদিখানায় রসদ মজুত থাকায় এখন আর পারাপারের প্রয়োজন এবং উপায়— কোনওটাই নেই। সেই বিচ্ছিন্নতাই দূরে ঠেলে দিয়েছে কোভিডকে।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)