ফাইল চিত্র।
আপাতদৃষ্টিতে সৌজন্য-শুভেচ্ছা। কিন্তু মার্চের ঘটনাক্রমের প্রেক্ষিতে সেই বার্তাই সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার মাত্র কয়েক ঘণ্টা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ছিলেন আইসিএমআর-নাইসেডের ডিরেক্টর। তারই মধ্যে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার অধিকর্ত্রীর সুস্থতা কামনা করে নবান্ন থেকে এল পুষ্পস্তবক। তাতে লেখা ‘গেট ওয়েল সুন’, দ্রুত সেরে উঠুন। শুভেচ্ছা-বার্তার প্রেরক মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত কয়েক দিনে রাজ্যে এক দিনে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যার মাপকাঠিতে রেকর্ড হচ্ছে রোজই। শুক্রবার সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৫৪২। তার পরের দু’দিন তা ছিল পাঁচশোর ঘরে। সোমবার সংখ্যাটা হয় ৬২৪। আর মঙ্গলবার ৬৫২। শুধু কলকাতাতেই ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা দু’শোর (২৩১) গণ্ডি ছাড়িয়েছে, যা এ-পর্যন্ত সর্বাধিক। নাইসেড-কর্ত্রী যে কলকাতার আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন, তা জানা যায় এ দিন সকালে।
বঙ্গে করোনা হানার গোড়ায় নমুনা পরীক্ষার কিট নিয়ে অসহযোগিতার অভিযোগে নাইসেডের সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনের বিস্তর চাপান-উতোর চলেছিল। তখন নাইসেড-অধিকর্ত্রী জানিয়েছিলেন, করোনাকে হারাতে গেলে কেন্দ্র ও রাজ্যকে একযোগে কাজ করতে হবে। ‘‘দিল্লির সঙ্গে কথা বলে সব সমস্যার সমাধান করতে দেরি হয়। বঙ্গবাসীর স্বার্থে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই,’’ বলেছিলেন তিনি। সেই সেতুবন্ধনে এ দিনের শুভেচ্ছা-বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
আরও পড়ুন: রাস্তায় না নামলে বেসরকারি বাস অধিগ্রহণ করার হুঁশিয়ারি মমতার
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, সোমবার রাতে নাইসেডের ডিরেক্টরের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এ দিন দুপুরে আইডিতে ভর্তি হন তিনি। সে-ভাবে উপসর্গ না-থাকায় বিকেলে আইডি-র চিকিৎসকেরা তাঁকে গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকার অনুমতি দেন। এরই মধ্যে নবান্ন থেকে পুষ্পস্তবক এলে প্রথমে সেটি তুলে দেওয়া হয় নাইসেড-প্রধানের স্বামীর হাতে। আইডি-র উপাধ্যক্ষ আশিস মান্না বলেন, ‘‘ক্লান্তিভাব, খাবারে অরুচির উপসর্গ নিয়ে নাইসেড-প্রধান হাসপাতালে ভর্তি হতে এসেছিলেন। নির্দেশিকা অনুযায়ী উনি যে-হেতু বাড়িতে থাকার উপযুক্ত, তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চাইলে উনি অন্য মেডিক্যাল কলেজ বা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে পারতেন। কিন্তু উনি আইডি-র উপরে আস্থা রাখায় আমরা গর্বিত। করোনা আবহে কী ভাবে চলতে হবে, মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা-বার্তাও সেই শিক্ষা দেয়।’’
করোনায় প্রথম পাঁচ*
• কলকাতা (২৩১)
• উত্তর ২৪ পরগনা (১৩৫)
• দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৬২)
• হাওড়া (৩৮)
• হুগলি (৩৬)
*গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের নিরিখে। বন্ধনীতে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা
সূত্র: রাজ্য সরকার
আইডি-তে যখন সৌজন্যের আবহ, তখন শহরের অন্য কোভিড হাসপাতাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র চিকিৎসকদের ক্ষোভ প্রশমনে বৈঠক চলে দফায় দফায়। একটি বৈঠকে তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা নির্মল মাজির ‘গড়’ হিসেবে পরিচিত মেডিক্যাল কলেজে ছিলেন তৃণমূলের অন্য চিকিৎসক-নেতা শান্তনু সেন। মেডিক্যাল কলেজে নন-করোনা রোগীর ভর্তি নিশ্চিত করতে আজ, বুধবার অবস্থান-বিক্ষোভে বসতে পারেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, করোনা রোগীর সংখ্যা যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে কোভিডের চিকিৎসায় মেডিক্যাল কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজন হবে। এ দিনই মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার এবং সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজে করোনার পাশাপাশি নন-করোনা রোগীর চিকিৎসা হবে, এই প্রতিশ্রুতি দিয়েও, মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার পরিদর্শনের পরে তা মানা হচ্ছে না। মেডিক্যাল কলেজে শুধুই কোভিড রোগীর চিকিৎসা হলে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের ক্ষতি হবে।
আরও পড়ুন: ভাড়াবাড়ি ছেড়ে ১২ ঘরের ফ্ল্যাটে উঠে গেলেন দিলীপ ঘোষ
এ দিনের বৈঠকে কী হল, সেই বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি শান্তনুবাবু। মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী নির্মল মাজি জানান, জুনিয়র চিকিৎসকদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে।