গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
টানা পাঁচ দিন পর ফের তিন হাজারের ঘরে রাজ্যের দৈনিক করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টাতেই এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। তাতেই সংক্রমণের সংখ্যা এক লাফে ৩ হাজারের ঘরে পৌঁছে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এক দিনে যত জন মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন, যা আশাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
গত ৩১ অগস্ট থেকে দৈনিক নতুন সংক্রমণ দু’হাজারের ঘরেই ঘোরাফেরা করছিল। শুক্রবার রাজ্যে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হন ২ হাজার ৯৭৮ জন। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিনে দেখা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩ হাজার ৪২ জন নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাতে সব মিলিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭০১। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৩৯০, শুক্রবারের চেয়ে যা ২৬৪ কম।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশি সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষায় শুরু থেকেই জোর দিয়ে আসছিল প্রশাসন। গত ২৯ অগস্ট থেকে লাগাতার রাজ্যে কোভিড টেস্টের সংখ্যা বেড়েছিল। সেই অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ হাজার ৭৮১ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তাতেই বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস ধরা পড়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: মাওবাদী কার্যকলাপ খতিয়ে দেখতে ঢাঙ্গিকুসুমে ডিজি, বৈঠক ঝাড়গ্রামে
প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যকের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায়, সংক্রমণের হারও বেড়ে ৬.৬৪ শতাংশ হয়েছে, শুক্রবার যা ৬.৫৩ শতাংশ ছিল।
গত ২৩ অগস্ট থেকে রাজ্যে দৈনিক মৃত্যুসংখ্যা পঞ্চাশের কোটায় ঘোরাফেরা করছে। শুক্রবার করোনার প্রকোপে রাজ্যে ৫৮ জন মারা গিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টাতেও ৫৮ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত করোনার প্রকোপে রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৫১০ জন করোনা রোগী।
তবে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়লেও, গত ২৪ অগস্ট থেকে যে ভাবে দৈনিক আক্রান্তের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন, এ দিনও তা অব্যাহত। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩ হাজার ২৪৮ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৮০১ জন রোগী। তাতে রাজ্যে সুস্থতার হার বেড়ে ৮৪.৮৬ শতাংশ হয়েছে।
দৈনিক সংক্রমণের জেলাগুলির মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনাই সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৫৫৯ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৭৩ জন রোগী। করোনার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। এর পরেই তালিকায় রয়েছে কলকাতা। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে ৫৪৮ জন নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৭৭ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন রোগী।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এ দিন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২১৭ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৭১ জন করোনা রোগী এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় হাওড়ায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১২২ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৬৪ জন রোগী। প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন। হুগলিতে যদিও এ দিন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১০০-র নীচে নেমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৯৬ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৮৯ জন করোনা রোগী। মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
এ ছাড়াও এ দিন যে জেলাগুলোতে শতাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন— পশ্চিম মেদিনীপুর (২৩৫), পূর্ব মেদিনীপুর (১৮০), পশ্চিম বর্ধমান (১২৩), বাঁকুড়া (১৩৩) এবং নদিয়া (১১২)। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। ২ জন প্রাণ হারিয়েছেন কোচবিহারে। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পূর্ব বর্ধমানেও ১ জন করে করোনা রোগী মারা গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ লক্ষ ছুঁতে পারে ডিসেম্বরে
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)