প্রতীকী ছবি।
বেশ কয়েক ধরে দিন ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ ৩ হাজারের নীচে থাকলেও শনিবারই ৩ হাজার পার হয়েছিল। রবিবারও রাজ্যের করোনা সংক্রমণে সেই ধারা বজায় থাকল। যদিও নতুন সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়েনি। উপরন্তু টেস্টের সংখ্যা বেড়েছে অনেক বেশি। তবে সুস্থতার হার বৃদ্ধি এবং সংক্রমণের হার অপরিবর্তিত থাকা রাজ্যের করোনা চিত্রে সদর্থক চিত্র বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে টানা বেশ কিছু দিন ধরেই প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা থাকছে বেশি। এতেও আশার আলো দেখছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তারা। যদিও এটাই করোনা সংক্রমণের চূড়ান্ত প্রবণতা, এমনটা এখনই মানতে নারাজ বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞরা।
রাজ্যে এক দিনে সর্বাধিক নতুন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২১ অগস্ট (৩২২৩)। এর পর থেকে অবশ্য কমতে শুরু করেছিল। গত ৩১ অগস্ট থেকে দৈনিক নতুন সংক্রমণ তিন হাজারের নীচে কিন্তু কাছাকাছি অর্থাৎ দু’হাজার নশো’র ঘরে ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু শনিবারের বুলেটিন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩ হাজার ৪২ জন নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। রবিবার আরও কিছুটা বেড়ে সেই সংখ্যা হয়েছে ৩ হাজার ৮৭। সব মিলিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৭৮৮।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার ২১৮। যা শনিবারের চেয়ে ১৭২ জন কম। অর্থাৎ প্রতিদিন সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। কারণ, নতুন আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। রবিবারও যেমন ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩২০৭ জন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮ জন কোভিড আক্রান্ত রোগী। রাজ্যে সুস্থতার হারও প্রতিদিন বাড়ছে। রবিবার এই হার ৮৫.১৯ শতাংশ। শনিবার এই হার ছিল ৮৪.৮৬ শতাংশ। অন্য দিকে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোয় জোর দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় টেস্ট হয়েছে ৪৬ হাজার ৫০৫ জনের। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ৭৮১।
আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে দেশের কিছু অংশে, মত এমস ডিরেক্টরের
প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে কত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। সংক্রমণের প্রবণতা বুঝতে এই হার তাৎপর্যপূর্ণ। এই সংক্রমণের হার যত কম হবে, তা করোনার গ্রাফের ক্ষেত্রে সদর্থক। আশার কথা, শনিবার আগের দিনের তুলনায় এই সংক্রমণের হার কিছুটা বাড়লেও রবিবার ফের স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। শুক্রবার এই হার ছিল ৬.৫৩ শতাংশ। শনিবার তা বেড়ে হয়েছিল ৬.৬৪। রবিবার সংক্রমণের হার অপরিবর্তিত।
তবে উদ্বেগের একমাত্র কারণ রয়েছে মৃত্যুর সংখ্যায়। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ এর আশেপাশে ঘুরছে অনেক দিন ধরে। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে কোভি়ড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ৫২ জনের। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৫৮। শুক্রবার ও শনিবার মৃত্যু হয়েছিল ৫৮ জনের। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত করোনার প্রকোপে রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৫৬২ জন করোনা রোগী।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় বার সংক্রমণের প্রথম নজির বেঙ্গালুরুতে, কী বলছেন চিকিৎসকরা
দৈনিক সংক্রমণের জেলাগুলির মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনাই সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৫৯০ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৩৭ জন রোগী। করোনার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। এর পরেই তালিকায় রয়েছে কলকাতা। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে ৫৪১ জন নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪০২ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন রোগী। মোট আক্রান্তের নিরিখে কলকাতার (৪৩ হাজার ৮৪) পরেই উত্তর ২৪ পরগনা (৩৭ হাজার ৭১১)। এর বাইরে গত ২৪ ঘণ্টায় হুগলিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯০ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৯০ জন, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৭৫ জন, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৫২ জন, পশ্চিম বর্ধমানে ১২৪ জন এবং নদিয়ায় ১১৭ জন।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)