গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় পুজোমণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সোমবার। সেই শঙ্কা যে অমূলক নয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার হাতেনাতে প্রমাণ মিলল। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে এই প্রথম এক দিনে নতুন করে করোনা সংক্রমিত হলেন ৪ হাজারের বেশি। মৃতের সংখ্যাও এ দিন ৬০-এর কোটায়। সেই সঙ্গে প্রায় দু’মাসের মধ্যে রেকর্ড সংক্রমণের হারও উৎসবের মুখে রাজ্য প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলল।়
মঙ্গলবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২৯ জন। এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনা সংক্রমিতের মোট সংখ্যা ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৫৭। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ নতুন করে কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়, ৮৭১ জন। দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে কলকাতা, ৮০৯ জন।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৬ হাজার ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। এর মধ্যে কলকাতায় মারা গিয়েছেন ১৭ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া হাওড়াতে এ দিন মারা গিয়েছেন ৬ জন। ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)
আরও পড়ুন: বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের নেতৃত্বে চিনকেই দেখছেন তারুর
গত ৬ অক্টোবর রাজ্যে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার কমতে কমতে নেমে গিয়েছিল ৭.৯৫ শতাংশে। তার পর থেকে ওই হার ফের বাড়তে শুরু করে। মাঝে এক-দু’দিন কমলেও মোটের উপর প্রবণতা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ২৪ ঘণ্টায় যত জনের কোভিড টেস্ট করা হয় এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। সোমবার সেই সংক্রমণের হার পৌঁছে গিয়েছিল ৯.১৫ শতাংশে। এ দিন তার থেকে বেড়ে সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ৯.২১ শতাংশ। গত ১৯ অগস্ট সংক্রমণের হার ছিল ৯.২২ শতাংশ। সোমবার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৪৩ হাজার ৬১৯টি। এ দিন তা কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ৭৬২। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৫১টি।
আরও পড়ুন: লকডাউন শেষ হলেও করোনা যায়নি, সাবধানবাণী মোদীর
সংক্রমণ এবং মৃত্যুর পাশাপাশি, আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সুস্থতার হার নিয়েও। এত দিন সংক্রমণ বাড়লেও সুস্থতার হার অনেকটা স্বস্তিতে রেখেছিল রাজ্য প্রশাসনকে। কিন্তু সেটাই এখন মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। রবিবার সুস্থতার হার ছিল ৮৭.৫৫ শতাংশ। সোমবার তা কমে হয় ৮৭.৪৮ শতাংশ। মঙ্গলবার তা আরও কমে হয়েছে ৮৭.৪৩ শতাংশ। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮২ জন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট সুস্থ কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭০৭। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৭০ জন।
শুধু উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতা নয়, অন্যান্য জেলার করোনা সংক্রমণের ছবিও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শতাধিক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন জেলাগুলি হল— দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২২৫), হুগলি (২৪৭), হাওড়া (২১১), পশ্চিম মেদিনীপুর (২২৪), পূর্ব মেদিনীপুর (১৩৯), পশ্চিম বর্ধমান (১২০), নদিয়া (১৫৬), জলপাইগুড়ি (১৪৩) এবং দার্জিলিং (১৪৯)।