গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির সামগ্রিক চিত্র দেখে ফের আশায় বুক বাঁধছেন বিশেষজ্ঞেরা। বৃহস্পতিবার থেকেই রাজ্যে নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছিল। সেই তুলনায় বাড়ছিল সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা। শনিবারও সেই ধারাই অব্যাহত রইল। একই সঙ্গে রাজ্যে সুস্থতার হার বেড়ে ৮৬.৯৬ শতাংশ হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ১৮৮ জন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই সংখ্যাটা ছিল যথাক্রমে ৩,১৯৭ এবং ৩,১৯২।
গত দু’দিনের চেয়ে এ দিন নয়া আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য কম হলেও, ৫ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা যে ভাবে ৩ হাজারের উপর ঘোরাফেরা করছে, এ দিনও তা অব্যাহত ছিল। তার জেরে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ২১ হাজার ৯৬০। এর মধ্যে এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২৪ হাজার ৬৪৮।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
নতুন করে সংক্রমণ কমার পাশাপাশি এ দিন রাজ্যে সুস্থতার সংখ্যাও আশা জুগিয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত লাগাতার বেশি কিছু দিন ধরে রাজ্যে ৩ হাজারের বেশি মানুষ প্রতি দিন সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সংখ্যাটা ২ হাজারের কোটাতেই ঘোরাফেরা করছিল। এ দিন তা ফের ৩ হাজার ছুঁইছুঁই। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ২ হাজার ৯৯৩ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড-টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড-রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই বলা হয় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৪৫ হাজার ৫৬৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে রাজ্যে এই মুহূর্তে সংক্রমণের হার ৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট কোভিড পরীক্ষা হয়েছে।
মৃত্যুর নিরিখেও এ দিন পরিস্থিতি খানিকটা শুধরেছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার মৃত্যুসংখ্যা ৬০-এর ঘরে গিয়ে ঠেকেছিল। শুক্রবার তা সামান্য কমে দাঁড়ায় ৫৯। এ দিন তা আরও খানিকটা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৫৬ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত করোনার কবলে রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ২৯৮ জন।
নয়া সংক্রমণের নিরিখে এ দিন বাকি জেলাগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে কলকাতা। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৩ জন। সুস্থও হয়ে উঠেছেন ৫৮৪ জন। কিন্তু মৃত্যুর নিরিখে একে অপরকে টেক্কা দিচ্ছে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা। দুই জেলাতেই গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জন করে প্রাণ হারিয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনায় এ দিন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৫০১ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫২০ জন করোনা রোগী।
এ ছাড়াও, এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন করোনা রোগী। ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে হুগলিতে। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন। হাওড়া ও বাঁকুড়ায় ২ জন করে রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। ১ জন করে প্রাণ হারিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, নদিয়া, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কালিম্পং, দার্জিলিং, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে।
আরও পড়ুন: লকডাউনে শুধুমাত্র শ্রমিক স্পেশালেই মৃত্যু ৯৭ পরিযায়ীর, মানল কেন্দ্র
আরও পড়ুন: অভিষেকের মানহানির নোটিস বাবুলকে
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)