ফাইল চিত্র।
আকাল চলছে করোনা টিকার। অনেকটা বাধ্য হয়েই এখন শুধু দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য। এই অবস্থায় আবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বুধবার নবান্নে বলেন, “বলতে পারেন, বাংলা কেন মাত্র ১.৯৯ কোটি ডোজ় (টিকা) পাবে? যেখানে উত্তরপ্রদেশ পায় সাড়ে তিন কোটির মতো! মহারাষ্ট্র পায় তিন কোটির বেশি। তারা পাক, আমার আপত্তি নেই। গুজরাত, রাজস্থানের মতো ছোট রাজ্যগুলিও আমাদের থেকে অনেক বেশি ভ্যাকসিন পেয়েছে। কিন্তু ওরা বাংলার বদনাম করে আর ভ্যাকসিন দেয় না।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিন কোটি ভ্যাকসিন চেয়েছিল রাজ্য। এখনও একটাও আসেনি। ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারের ট্রেজ়ারি থেকে ৫৯ কোটি টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনেছি। অন্যান্য রাজ্য যদি তিন-সাড়ে তিন কোটি টিকা পায়, তা হলে আমি কেন এক কোটি কম পাব? এই এক কোটি পেলে এক কোটি লোককে প্রথম ডোজ় দিয়ে দিতে পারতাম। আমি কেন্দ্রের কাছে চিঠি লিখব।’’
রাজ্যে করোনার দৈনিক সংক্রমণের হার কিছুটা নিম্নমুখীই। এ দিন তা নেমেছে দেড় হাজারের নীচে। নতুন করে আক্রান্ত ১৪৭৮ জন। কিন্তু তৃতীয় তরঙ্গের আশঙ্কা রয়ে গিয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশে করোনার বিভিন্ন টিকা আর ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা প্রয়োগ-পরীক্ষা চলছে। সেই গবেষণার তালিকায় নাম জুড়েছে পশ্চিমবঙ্গেরও। কোভ্যাক্সিন, স্পুটনিক-ভি, জাইকোভ-ডি টিকার পরে করোনা চিকিৎসায় আমেরিকার ‘মার্ক’ সংস্থার তৈরি অ্যান্টিভাইরাল ‘ওরাল ড্রাগ’ বা সেবনযোগ্য ওষুধ ‘মোলনুপিরাভির’ ব্যবহারের জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করছে হায়দরাবাদের সংস্থা ‘ড. রেড্ডিজ়’। স্বাস্থ্য শিবির সূত্রে খবর, দেশে মোট ২৫টি হাসপাতালকে তৃতীয় পর্যায়ের ওই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বাছাই করা হয়েছে। তার মধ্যে বাংলার দু’টি বেসরকারি ও একটি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। বঙ্গে ওই ট্রায়ালের সমন্বয়কারী সংস্থা ক্লিনিমেড লাইফ সায়েন্স সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে রুবি জেনারেল, কস্তুরী দাস মেমোরিয়াল এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজকে ‘ট্রায়াল সাইট’ হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, দেশে ১২১৮ জন করোনা আক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবকের উপরে এই ওষুধ পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। রাজ্যে তিনটি হাসপাতাল মিলিয়ে ১৫০ জনের উপরে সেটি প্রয়োগ করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। ট্রায়াল শুরুর জন্য রুবি জেনারেল হাসপাতাল ইতিমধ্যেই এথিক্স কমিটির ছাড়পত্র পেয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাকি দু’টি হাসপাতালের এথিক্স কমিটির বৈঠক আছে। এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রাজ্যের ফেসিলিটেটর স্নেহেন্দু কোনার জানান, স্বেচ্ছাসেবকদের হাসপাতালে আসতে হবে শুধু পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রথম দিন। ট্রায়ালে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করলে পরের পাঁচ দিন বাড়িতেই দিনে দু’টি ওষুধ খেতে পারবেন তাঁরা। ষষ্ঠ দিনে সংশ্লিষ্ট রোগীর আরটিপিসিআর পরীক্ষা করা হবে। ‘‘প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ওই ওষুধ বিভিন্ন আরএনএ ভাইরাসের প্রতিরূপ গঠন-ক্রিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। তার ফলে বিভিন্ন জ্বর, সাধারণ সর্দি, কাশি-সহ মার্স, করোনা ভাইরাস ঠেকানো সম্ভব,’’ বলেন স্নেহেন্দুবাবু।