মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।
দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যে এলে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধির আশঙ্কা করছে রাজ্য সরকার। সরকারের দাবি, করোনা-সংক্রমণ ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে আসছিল। কিন্তু কেন্দ্রের ‘একপেশে’ পদক্ষেপের কারণে সেই পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজ্যের সঙ্গে কথা না-বলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রেলের ভূমিকার সমালোচনা করে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ, মানুষকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপযুক্ত পদক্ষেপ করুন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বুধবার রাজ্যে ১১টি ট্রেন এসেছে। আজ, বৃহস্পতিবার ১৭টি ট্রেন রাজ্যে চলে আসবে। প্রশাসন এবং রেল সূত্রের খবর, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজ্যে আসা বেশ কিছু ট্রেন হাওড়ার বদলে এনজেপি পাঠানো হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গের শ্রমিকেরা অনেকে চেন টেনে বর্ধমান, রামপুরহাট লাইনে নেমে পড়ছেন। আমপান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সেই সব ট্রেনে করে আসা হাজার হাজার মানুষের জন্য ব্যবস্থা করা প্রশাসনের পক্ষে খুব কঠিন। সেই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘করোনা কন্ট্রোল করে দিয়েছিলাম। আমাকে রাজনৈতিক ভাবে বিরক্ত করতে গিয়ে রাজ্যের সর্বনাশ কেন করে জানি না। পরিকল্পনা করার সময় তো দেবে! রেল মন্ত্রকের দায়বদ্ধতা নেই? রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হয়নি? রাজনৈতিক মর্জিমতো আপনারা গায়ের জোরে কাজগুলো করছেন। তাতে রাজ্যের বিপদ বাড়ছে। বুঝতে পারছেন না? দুর্যোগ, মানুষের দুর্ভোগ না আপনাদের চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি সামলাব? সব কিছু ‘টু মাচ’ করছেন আপনারা। লক্ষ লক্ষ লোককে কোয়রান্টিন করার পরিকাঠামো আমার কোথায়?’’
যে ট্রেনগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে আসবেন, তার খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে বলে আগেই জানিয়েছিল নবান্ন। তার পরেও দূরত্ব-বিধি না মেনে ট্রেনে কেন শ্রমিকদের তোলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য। সরকারের দাবি, যে সব রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা আসছেন, সেখানে করোনা-প্রকোপ তুলনায় অনেক বেশি। ফলে অনেকে আসছেন সংক্রমণ নিয়েই। মমতার কথায়, ‘‘ আমি যদি না পারি, করোনা-প্রভাবিত এলাকা এবং কোয়রান্টিন সেন্টারগুলির দায়িত্ব নিক কেন্দ্র। কয়েক দিন আগে অমিত শাহকে বলেছিলাম, এত দল পাঠাচ্ছেন, পাঠান। আপনার যদি মনে হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার সামলাতে পারছে না, আপনি নিজে করোনা সামলান, আমার আপত্তি নেই। তবে তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তিনি বলেছিলেন, নির্বাচিত সরকারকে কী ভাবে ভাঙতে পারি?’’
আরও পড়ুন: তপ্ত ভারত-চিন সীমান্ত, মধ্যস্থতা করতে চেয়ে টুইট ডোনাল্ড ট্রাম্পের
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তোমরাই লকডাউন করেছো। কিন্তু রেল রেলের মতো চলছে। এটা রাজনীতির সময় নয়। এই সর্বনাশা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইব। দয়া করে সহযোগিতা করুন।’’ এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসকদের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স এবং ব্লকস্তরেও বিডিও-এর নেতৃত্বে কমিটি গড়া হবে। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, দিল্লি এবং চেন্নাই থেকে আগতদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিন করবে জেলা প্রশাসন। ১৪ দিন পরে স্বাস্থ্যপরীক্ষায় নেগেটিভ হলে বাড়ি পাঠানো হবে। পজ়িটিভ হলে রোগের প্রাবল্য বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য দফতর। সংশ্লিষ্টদের খাবারের ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। এই পাঁচ রাজ্যের বাইরে অন্য রাজ্য থেকে কেউ এলে বাড়িতেই আলাদা থাকবেন। তবে প্রত্যেকে পরিযায়ী শ্রমিক নির্দেশ মানছেন কি না, তার উপর নজর রাখবে প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, কে কোথা থেকে আসছেন এবং তিনি কী কাজ করতেন, তার তালিকা থাকবে জেলাশাসকদের কাছে।
আরও পড়ুন: পরিযায়ীদের ঢলে জেলায় বাড়ছে করোনা উদ্বেগ