State news

বাজার খুলতেই উপচে পড়ল ভিড়, বাড়তি দামে মাছ-মাংস-সব্জি কিনলেন মানুষ

যে যেমন পারছেন, খাবার মজুতের চেষ্টা করে চলেছেন। গড়িয়া থেকে গড়িয়াহাট, বেহালা থেকে বেলেঘাটা-শহরের সর্বত্রই একই চিত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ১১:২৬
Share:

যদুবাবুর বাজার। ছবি: রয়টার্স।

বাজার খুলতেই লকডাউনের আগে বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী মজুত করার হুড়োহুড়ি পড়ে গেল মানুষেরমধ্যে। সোমবার সকাল হতেই সব্জি বাজার থেকে শুরু করে মুদিখানার দোকানে উপছে পড়েছে ভিড়। যে যেমন পারছেন, খাবার মজুতের চেষ্টা করে চলেছেন। চাল-ডাল-আলু-পিঁয়াজ-তেল-মশলার পাশাপাশি মাছ-মাংসের দোকানেও এ দিন ভালই ভিড় দেখা গিয়েছে। গড়িয়া থেকে গড়িয়াহাট, বেহালা থেকে বেলেঘাটা-শহরের সর্বত্রই একই চিত্র।

Advertisement

আজ সোমবার বিকেল ৫টায় লকডাউন হতে চলেছে। যদিও সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যসামগ্রী পেতে কোনও অসুবিধা হবে না।

কারণ, খাবার, মুদিখানা, সব্জি, ফল, মাংস, মাছ, পাউরুটি, দুধ, ডিম, ওষুধ সবই পাওয়া যাবে। কিন্তু বাজার বন্ধ না থাকলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাছাড়াও মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছে, যেহেতু চিকিত্সকেরা বারবারই বলছেন, করোনাভাইরাসের কোনও ওষুধ নেই এবং এই সংক্রমণ আটকানোর একমাত্র উপায় হল বেশি বাইরে না বেরনো, তাই বেশি করে খাদ্য সামগ্রী বাড়িতে মজুত করে রাখতে চাইছেন সকলেই। যাতে বাড়ি থেকে বেরতে না হয়। মানুষের মধ্যে আরও একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, দোকান খোলা থাকলেও জিনিসপত্র কি পাওয়া যাবে? কারণ পরিস্থিতি কোন দিকে এগোবে এবং কতদিন ধরে তা চলবে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।

Advertisement

বেহালা বকুলতলা মাছ বাজার।

আরও পড়ুন: করোনা সতর্কতা: আজ থেকে ঘরবন্দি থেকেই লড়াই এই রাজ্যেও

এ দিন বেহালার বকুলতলা বাজারে এসে তেমনই ভিড় চোখে পড়েছে। বাজার করতে এসেছিলেন সোমনাথ সরকার। তিনি প্রথমেই মুদিখানা বাজার করে ফেলেন। তিনি বলেন, “লকডাউন তো বিকেল থেকেই হয়ে যাচ্ছে, তাই যতটা পারছি বাজার করে রাখছি, যাতে বেশি বাইরে না বেরতে হয়।”

বকুলতলা বাজারের এক মাছ বিক্রেতা শঙ্কর দাস বলেন, “প্রচুর মাছ আগে থেকেই স্টোর করে রেখেছি। বিক্রিও হচ্ছে তেমন। অনেকেই বেশি করে মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফ্রিজে স্টোর করে রেখে দেবেন।” যাদবপুরের এক বাসিন্দা হীরক বিশ্বাস যেমন বলেন, “বাজারে যাচ্ছি না। অনলাইনেই সব্জি অর্ডার দিয়েছিলাম। কাল রাতেই দিয়ে গিয়েছে।” সকালেই বড় ব্যাগ হাতে ক্যানিং বাজারে পৌঁছে গিয়েছেন মানসকুমার নস্কর। স্কুলের শিক্ষক তিনি। বললেন,“এরকম একটা হতে পারে আঁচ করেছিলাম, তাই সব আগে থেকেই মজুত করে রেখেছি বাড়িতে। কিন্তু আজ আবার বিকেল থেকে লকডাউন, তাই আর ঝুঁকি নিতে চাইছি না। আরও বেশি মজুত করে রাখতে চাই।”

আরও পড়ুন: সাবধানতার অভাবেই কলকাতায় করোনা আক্রান্ত আরও ৩

একই ভাবে ক্যানিং, বজবজ-সহ রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই বাজারের ছবিটা এই রকমই। বিভিন্ন জেলার প্রধানত শহরকেন্দ্রিক বাজারগুলোতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুত রাখার হিড়িক চোখে পড়েছে। কিছু কিছু ক্রেতার অভিযোগ, অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিন কিছু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যেখানে এতদিন মুরগির মাংসের দাম প্রতি কেজিতে কোথাও কোথাও ৫০-৬০ টাকায় নেমে এসেছিল, সেখানে এ দিন সেটা ১৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। তেমনই আলু ১৮-২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও, পিঁয়াজ (তিন ধরনের) ২০, ৩০ এবং ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কাটা রুই ২০০ এবং ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, কাতলা মাছ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ টাকায়। পাঠার মাংস ৭০০ টাকা কেজি। একলাফে দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় কালোবাজারির অভিযোগ তুলেছেন ক্রেতারা। তার উপর একসঙ্গে অনেক মানুষ ভিড় করায় মজুত সামগ্রীও ফুরিয়ে এসেছে কোথাও। যেমন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ বেলঘরিয়া বাজারে দেখা যায় সামগ্রী শেষ হয়ে গিয়েছে।

বেলঘরিয়া বাজার। তখনও প্রচুর ক্রেতার ভিড় দোকানে অথচ সামগ্রী প্রায় শেষ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য টাস্ক ফোর্স গড়ে দিয়েছেন। সেই টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে এ দিন বলেন, “নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান বন্ধ হচ্ছে না। তবু মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কোনও কোনও বাজারে দাম বেশি নেওয়ার খবর আসছে, সেখানে অফিসারদের পাঠানো হয়েছে। আলু এবং অন্যান্য সামগ্রীর জোগানও যথেষ্ট রয়েছে, তাই এত দাম নেওয়ার কারণ নেই, যাঁরা বেশি দাম নেবেন, ধরা পড়লে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছবি: সোমনাথ মণ্ডল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement