প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র ছবিটা একই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এ বার পল্লি-চিকিৎসকদেরও করোনা যুদ্ধে সামিল করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।
বুধবার কোভিড বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার পল্লি-চিকিৎসক রয়েছেন। এ বার তাঁদেরও গ্রামে কোভিড মোকাবিলায় যুক্ত করা হবে। একটা সময় ছিল যখন এই পল্লি-চিকিৎসকেরা হাতুড়ে চিকিৎসক বলে পরিচিত ছিলেন এবং তাঁরা পুরোপুরি ব্রাত্য ছিলেন। কোনও রকম সরকারি স্বীকৃতি তাঁদের মিলত না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ওই পল্লি-চিকিৎসকদের মূল স্রোতে এনে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করানোর জন্য বলা হয়েছিল। সেই মতো বেশ কিছু সংগঠনও তাঁদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিল।
তবে মূলত কোভিড-সহ অন্যান্য কারণে শেষ একবছর ধরে সেই প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন দীর্ঘদিন ওই পল্লি-চিকিৎসকদের নিয়ে কাজ করা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। তাঁদের সংগঠন লিভার ফাউন্ডেশন এবং নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় যৌথ ভাবে ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত পল্লি-চিকিৎসকদের উপরে গবেষণা চালায়। ২০১৬ সালে সায়েন্স পত্রিকাতে প্রকাশ পায় যে ওই পল্লি-চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিলে মানুষের কল্যাণ হয়। এরপরে ২০১৭-১৮ সালে রাজ্য সরকার পল্লি-চিকিৎসকদের ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তার জন্য কমিটিও গঠন করা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে ওই পল্লি-চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয় বলে জানান অভিজিৎবাবু।
তবে অভিজিৎবাবু এটাও বলছেন, ‘‘এঁরা কখনও চিকিৎসকের বিকল্প নন। কিন্তু জ্বর, কাশি-সর্দি, পেট খারাপে অবিলম্বে চিকিৎসার জন্য এই গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। তবে এঁরা ভুল কাজও করেন। তাই এঁদের বোঝাতে হবে নিজেদের প্রচলিত চিকিৎসক বলার অধিকার কিন্তু তাঁদের নেই।’’
করোনা যখন গ্রামেও হানা দিচ্ছে তখন পল্লি-চিকিৎসকদের কোভিড মোকাবিলায় কাজে লাগানো জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অত্যন্ত সময়পোযোগী বলেই মত চিকিৎসক অভিজিৎবাবু-সহ অন্যান্যদেরও। তাঁরা জানাচ্ছেন, করোনার ক্ষেত্রে এখন সব থেকে বড় সমস্যা হল, মৃদু উপসর্গ থাকলেও মানুষ তা উপেক্ষা করে যাচ্ছেন কিংবা চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না। গ্রামের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা আরও বেশি। যদিও স্বাস্থ্য দফতর তাদের নির্দেশিকায় বারবার বলেছে, কী ভাবে বাড়িতেই মৃদু উপসর্গযুক্ত করোনা রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অভিজিৎবাবু বলছেন, "প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে কেউ নেই সেখানে এঁরা রয়েছেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি তাঁদের ব্যবহার করা যায় তাহলে ভালই হবে। কারণ কোনও সমস্যা হলে গ্রামের মানুষ প্রথমে এঁদের কাছেই যান। তাতে অন্তত উপসর্গ বুঝে করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া যাবে।"
তবে চিকিৎসকেরা এটাও জানাচ্ছেন, করোনা ব্যবস্থাপনার নির্দেশিকা অনুযায়ী যেমন কোথায় কী চিকিৎসা করতে হবে তা পল্লি চিকিৎসকদের শিখিয়ে দিতে হবে, তেমনই কোথায় গিয়ে থামতে হবে সেটাও বুঝিয়ে দিতে হবে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এখন প্রথম কাজ হল দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা। গ্রামের মানুষ এ বার সেই সুযোগ পাবেন। দ্রুত পরীক্ষাও করাবেন।" অভিজিৎবাবু বলছেন, ‘‘যেখানে বিজলির বাতি নেই, সেখানে মোমের আলোও অনেক ভরসার।’’