গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দুর্গোৎসবে প্যান্ডেলমুখী জনতা যে করোনার বিপদ বাড়াচ্ছে, রবিবার ফের তার প্রমাণ দিল রাজ্যের পরিসংখ্যান। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে কোভিড টেস্ট হয়েছে শনিবারের তুলনায় প্রায় ২ হাজার ২০০ কম। অথচ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করোনা আক্রান্ত কমল মাত্র ২১ জন। সংখ্যার বিচারে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও প্রকৃতপক্ষে তা যে কম নয়, প্রমাণ দিচ্ছে সংক্রমণের হার। শনিবারের এই হার ছিল ৯.২৭। রবিবার তা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৯.৭০। হাইকোর্টের রায়ে প্যান্ডেলের ভিতরে ঢুকতে পারেননি দর্শকরা। কিন্তু প্রতিমা নিরঞ্জনে সেই আগল খুলে যাবে না তো— এমন আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে রাজ্য প্রশাসনের।
২০ অক্টোবর থেকে রাজ্যে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণ ৪ হাজার পার হয়েছে। রবিবারও তার ব্যতিক্রম নেই। এই নিয়ে পর পর ছ’দিন সংক্রমণের এমন প্রবণতা। রবিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৪ হাজার ১২৭ জনের। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৪৮। রাজ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল ২২ অক্টোবর, ৪ হাজার ১৫৭ জনের। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ৭০১। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ২৪ পরগনায় (৯১৫) সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মাত্র ৫ জন কম আক্রান্ত হয়েছেন কলকাতায়।
সংখ্যার চেয়েও করোনা সংক্রমণের প্রবণতা বুঝতে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনও একটি এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় যত জনের কোভিড টেস্ট করা হয় এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত কয়েক দিন ধরেই এই হার ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু রবিবার এই সংক্রমণের হার বেড়েছে লাফিয়ে। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় টেস্ট হয়েছে ৪২ হাজার ৫৩৮টি। শনিবার যা ছিল ৪৪ হাজার ৭২৪। অর্থাৎ এ দিন টেস্ট কম হয়েছে ২ হাজার ১৮৬। এত কম টেস্ট করেও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ২১ জন কম। আগের দিনের সম সমখ্য়ক টেস্ট হলে পজিটিভ রিপোর্টের সংখ্যা অবধারিত ভাবেই বাড়ত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত আরবিআই গভর্নর, আইসোলেশনে থেকেই কাজ
রাজ্য প্রশাসনের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা একই জায়গায় ঘোরাফেরা করার প্রবণতা। শনিবারের বুলেটিনে মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৯। রবিবার তা বেড়ে হয়েছে ৬০। এই নিয়ে রাজ্যে মোট কোভিডের বলি হলেন ৬ হাজার ৪৮৭ জন। আক্রান্তের মতো ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যাতেও শীর্ষে উত্তর ২৪ পরগনা (১৮)। কলকাতায় ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ১৪ জন। ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। ৩ জন করে মারা গিয়েছেন হাওড়া, হুগলি, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে।
সংক্রমণের হার যেমন ঊর্ধ্বমুখী, তেমনই সুস্থতার হারেও বেশ কিছু দিন ধরে উদ্বেগে রাখছিল রাজ্য প্রশাসনকে। তবে রবিবার সেই হার কিছুটা বেড়েছে। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী সুস্থতার হার ৮৭.৫৬ শতাংশ। শনিবার এই হার ছিল ৮৭.৪৯ শতাংশ। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ হাজার ৮৫৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। এই নিয়ে রাজ্যে মোট সুস্থ হয়ে উঠলেন ৩ লক্ষ ৬ হাজার ১৯৭ জন। রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ১৭।
আরও পড়ুন: ঘরে বসে দেবীদর্শন: দেখুন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার এবং খিদিরপুর পল্লি
কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার পাশাপাশি অন্য কয়েকটি জেলা নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে রাজ্য প্রশাসনের। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২৭৬), হুগলি (২৫২) ও হাওড়া (২১৭)। এর বাইরে দুই শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এক মাত্র নদিয়া জেলায়। এই জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমিত হয়েছেন ২২০ জন। শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এমন জেলা তিনটি। গত ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিঙে ১৩৪, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১২৭, এবং পূর্ব মেদিনীপুরে নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ১২৩ জন।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)