গুরুসদয় দত্ত রোডে বিএসএফের ইস্টার্ন কমান্ডের এই সদর দফতরেই রয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি।—নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্ঘাতের আবহ কাটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তার পরেও বুধবার সারাদিন ঘরবন্দিই থাকলেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। তা নিয়ে নানা মহলে শুরু হয়েছিল জল্পনা। তার অবসান ঘটল এ দিন সন্ধ্যায়, যখন রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে নির্দিষ্ট করে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, কোথায় কোথায় যেতে চান তাঁরা। একই সঙ্গে তার জন্য কী কী নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে রাজ্য সরকারকে তাও জানিয়ে দেওয়া হল। রাজ্যে কোভিড-১৯ টেস্টের প্রক্রিয়া, টেস্টের সংখ্যা, কিটের পরিমাণ, করোনায় মৃত ঘোষণার প্রক্রিয়ার মতো বিষয়ও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিনিধি দলের ওই চিঠিতে। পাশাপাশি কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকারের কোনও চাহিদা বা দাবিদাওয়া থাকলে তাও জানাতে পারবে রাজ্য।
কলকাতায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রয়েছেন গুরুসদয় দত্ত রোডে বিএসএফের ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতরে। উত্তরবঙ্গের দলটি রয়েছে শিলিগুড়িতে। সঙ্ঘাতের অবসানের পরেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গুরুসদয় দত্ত রোডে পাইলট কার ও তিনটি গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও বুধবার সারাদিন কার্যত কোথাও বেরোননি ওই প্রতিনিধিরা। ফলে জল্পনা শুরু হয়েছিল, আদৌ তাঁরা বেরোবেন তো? বেরোলে কোথায় কোথায় যেতে পারেন, তা নিয়েও নানা মহলে চর্চা শুরু হয়েছিল। শুধুমাত্র কলকাতাতেই, নাকি শহরের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁরা পরিদর্শন করবেন রাজ্যের চার সংক্রমিত জেলায়? এ সব প্রশ্ন নিয়ে দিনভর রাজ্যবাসী ও সংবাদমাধ্যমের নজর ছিল প্রতিনিধিদের উপর। শুধুমাত্র বালিগঞ্জ থানার আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন তাঁরা। কিন্তু ওই বৈঠকেও এ সব প্রশ্ন বা জল্পনার সমাধানের ইঙ্গিত মেলেনি।
অবশেষে এ দিন সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে অপূর্ব চন্দ্র রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চার পাতার একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে রীতিমতো ক্রমিক সংখ্যা ধরে ধরে বলা হয়েছে, প্রতিনিধিরা কোথায় কোথায় যেতে চান এবং তার জন্য কী কী ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। সোমবার সকাল দশটা নাগাদ রাজ্যে পৌঁছনোর পর থেকে বুধবার পর্যন্ত পুরো পরিস্থিতি বর্ণনার পর কী কী খতিয়ে দেখবেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা, ক্রমিক সংখ্যা ধরে ধরে তার উল্লেখ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যে করোনা সংক্রমণের মোকাবিলায় কার্যত গোটা ব্যবস্থাকেই খতিয়ে দেখতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা জানতে চাইবেন
• রাজ্যে কোভি-১৯টেস্ট কি পর্যাপ্ত?
• রাজ্যে টেস্টিং-এর যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা কি সম্পূর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে?
• কী কী প্রোটোকল বা পদ্ধতি মেনে কোভিড-১৯ টেস্ট করা হচ্ছে?
• চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই, মাস্ক— এই সব সুরক্ষা সামগ্রী কত রয়েছে?
• অক্সিজেন বেড, আইসিইউ বেড, অক্সিজেন সরবরাহ ও ভেন্টিলেটরের সংখ্যা কত?
• সংক্রমিত এলাকায় ক’টি সমীক্ষক দল রয়েছে এবং তারা প্রতিদিন কত জনের সমীক্ষা করছে?
• সংক্রমিত চার জেলায় কোভিড কেয়ার সেন্টার, কোভিড হেল্থ সেন্টার এবং কোভিড হেল্থ হসপিটালের হাল কেমন?
• চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কত জন আক্রান্ত, তাঁদের সুরক্ষা ও চিকিৎসার পাশাপাশি ওই সব হাসপাতালেরই বা কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে
• রাজ্য স্তরে যে চিকিৎসক দল করোনাভাইরাসে মৃত্যু নিশ্চিত করছেন, তার প্রক্রিয়া কী?
কিন্তু এর বাইরেও একাধিক বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। সেগুলির মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্য আক্রান্তদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া, কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা, কোয়রান্টিন সেন্টারগুলির সামগ্রিক পরিস্থিতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগান, ত্রাণকেন্দ্রগুলির অবস্থা, লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব কার্যকর করার প্রক্রিয়া। এই সব বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কি না, তাও জানতে চাইবেন তাঁরা। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে সাহায্যের প্রয়োজন থাকলে তাও জানাতে পারে রাজ্য প্রশাসন।
আরও পড়ুন: বাংলার নামে কুৎসা রটানোর চেষ্টা হচ্ছে: মমতা
কিন্তু কোথায় কোথায় যেতে পারেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা, তা নিয়ে জল্পনা চরমে ছিল। তার অবসান ঘটিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, কিছু হাসপাতাল, কোয়রান্টিন সেন্টার, সংক্রমিত এলাকা, বাজারের মতো জায়গায় যেতে পারেন এবং সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন তাঁরা। ক্রমিক সংখ্যা ধরে তার একটি তালিকাও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। তার মধ্যে রয়েছে:
• কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেলগাছিয়া বস্তি, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বউবাজার, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের ট্যাংরা-ধাপা এলাকা
• এম আর বাঙুর হাসপাতাল ও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল
• হাতিবাগান বাজার, বেলেঘাটা বাজার, গার্ডেনরিচে ধানখেতি বাজার ও তিলজলার কোহিনুর মার্কেট
• হাওড়ার সালকিয়া, পিলখানা (পিএম বস্তি ও চৌরা বস্তি), সত্যবালা আইডি হাসপাতাল, আইএলএস হাসপাতাল, ডুমুরজলা স্টেডিয়াম, ধুলাগড় পাইকারি বাজার, উলুবেড়িয়া বাজার
• উত্তর ২৪ পরগনার উত্তর দমদম পুরসভার ১৯ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড (বিরাটি এলাকা), দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৩ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড (দক্ষিণদাঁড়ি এলাকা), সল্টলেকের এএমআরআই হাসপাতাল, বারাসতের জিএনআরসি নার্সিং হোম, নিউটাউনের চিত্তরঞ্জন ক্যানসার রিসার্চ হাসপাতাল ও হজ হাউসের কোয়রান্টিন সেন্টার
• পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা মিউনিসিপ্যাল মার্কেট, শহিদ মাতঙ্গিনী গ্রাম পঞ্চায়েত, হলদিয়া শহর, পাঁশকুড়ার বড়মা কোভিড হাসপাতাল, তমলুক জেলা হাসপাতাল ও হলদিয়া মহকুমা হাসপাতাল এবং হলদিয়া বন্দর
আরও পড়ুন: অপরাধমূলক শাসন চলছে বাংলায়: টিভি সাক্ষাৎকারে তীব্র আক্রমণ ধনখড়ের
চিঠির শেষে কড়া বার্তা, যাঁদের কোভিড-১৯ মোকাবিলা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান নেই, এমন দু’-একজন পুলিশ অফিসার পাঠিয়ে দায় সারা যাবে না। বরং পুরো বিষয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত, এমন স্থানীয় প্রতিনিধিদের রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে পরিদর্শনে যাওয়ার আগেই পিপিই, মাস্ক-সহ যাবতীয় সুরক্ষা ও প্রতিরোধী সামগ্রীর ব্যবস্থাও করে রাখতে হবে রাজ্য সরকারকে। এ ছাড়া প্রতিনিধিদের যাতায়াত-সহ সমস্ত রকম ‘লজিস্টিক সাপোর্ট’-এর ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)