গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান তিন হাজারের কাছে ঘোরাফেরা করছে। তবে তার মধ্যেই স্বস্তি জোগাচ্ছে সুস্থতার হার। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ২০৮ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮ হাজার ৪৫৯। তার মধ্যে ৭০ হাজার ৩২৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল পর্যন্ত রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬ হাজার ৩৭৫। এ দিন তা কমে ২৬ হাজার ৩১-এ এসে ঠেকেছে। তার ফলে রাজ্যে সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১.৪৩ শতাংশ, যা যথেষ্ট আশাজনক বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৯৩৯ জন। এ দিন সেই সংখ্যাটাও সামান্য কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৯০৫ জন। গতকাল রাজ্যে ৫৩ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ জন করোনা রোগী।
প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড-টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড-রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। সোমবার প্রকাশিত বুলেটিনে রাজ্যে সংক্রমণ হার ১১.০৫ শতাংশ। গত এক মাসে এই প্রথম সংক্রমণের হার এত নীচে নামল। এর আগে, ৯ জুলাই রাজ্যে সংক্রমণের হার সবচেয়ে কম ছিল, ১০.০৭ শতাংশ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে এক দিনে ৩ চিকিৎসকের মৃত্যু
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশি করে লালারসের নমুনা পরীক্ষায় জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১১ লক্ষ ৩২ হাজার ১৯৬ জনের লালারসের নমুদা পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা হয়েছে ২৬ হাজার ২৯৭ জনের। তার পরেও সংক্রমণের হার গতকালের চেয়ে কম হওয়ায় স্বস্তিতে প্রশাসন।
রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ এবং মৃত্যুর নিরিখে শুরু থেকেই শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। এ দিনও সেই ধারাই বজায় রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় শহর কলকাতায় ৬১৮ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। তবে সুস্থতার হারেও এগিয়ে কলকাতাই। গত ২৪ ঘণ্টায় শহর কলকাতায় ৮৪৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
কলকাতা সংলগ্ন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও এ দিন কয়েকশো মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ২৪ পরগনায় ৪৯১ জন কোভিডে সংক্রমিত হয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সংখ্যাটা তুলনামূলক কম। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৯৫ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় এ দিন ১২ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন।
তবে দুই পরগনায় সুস্থও হয়ে উঠেছেন বহু করোনা রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ২৪ পরগনায় গত ৬০৪ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৪৭ জন। হাওড়া এবং হুগলিতেও এ দিন যথাক্রমে ২৬৯ এবং ৮৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ দিন নতুন করে হাওড়ায় সংক্রমিত হয়েছেন ২০৯ জন। ১১২ জমন সংক্রমিত হয়েছেন হুগলিতে। দুই জেলায় যথাক্রমে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন এবং ১ জন।
পূর্ব মেদিনীপুরেও এ দিন শতাধিক মানুষ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১৮ জন। পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন করে ৭৭৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দুই জেলাতেই এ দিন ১ জন করে প্রাণ হারিয়েছেন।
এর পাশাপাশি, মালদহ ও দার্জিলিঙেও এ দিন শতাধিক মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মালদহে সংখ্যাটা ১১২। ১৩৩ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন দার্জিলিঙে। তবে দুই জেলাতেই এ দিন কারও মৃত্যু হয়নি। বরং দার্জিলিঙে এ দিন ১৯২ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মালদহে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১৪১ জন। মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া— দুই জেলাতে এ দিন ২ জন করে করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে মারা গিয়েছেন ১ জন করোনা রোগী।
আরও পড়ুন: অফিস পাড়ায় বহুতলে আগুন, নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে দমকল
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)